সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভোট নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থীরা

চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোট নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থীরা

প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় দ্বিতীয় ধাপের ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থীরা। ভোটাররাও ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এ ছাড়া ভোটে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন স্পিকারকে চিঠি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জেলায় এমপিদের নামে ভোট চাওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের আচরণবিধির তোয়াক্কা করছেন না প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের টেবিলে টেবিলে শত শত অভিযোগ জমা পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো এসব অভিযোগ ফাইলবন্দি করে রেখে দিচ্ছেন। অনেক সময় এসব অভিযোগ কমিশনের কাছেও উপস্থাপন করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ২১ জন একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন সাতজন করে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।

প্রথম ধাপে আটজন চেয়ারম্যানসহ ২৮ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে ইতোমধ্যে প্রচারণায় নেমে গেছেন। ২ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রচারণা করতে পারবেন তারা। এ ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল গত ৩০ এপ্রিল। দ্বিতীয় ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৮২৮ জন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৪ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন।

গত ৮ মে প্রথম ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। পর্যবেক্ষরা বলছেন,  ভোটের দিন হামলা, গুলি, সংঘর্ষ, জাল ভোট, কারচুপির ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই ভোট বর্জনও করেছেন। অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে দুটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করা হয়। অনিয়মের চেষ্টার অভিযোগে আটক করা হয় ৩৭ জনকে। অনেক জায়গায় শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও প্রায় সব জায়গায়ই ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। সংঘর্ষ হয়েছে- চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে, নরসিংদী, মাদারীপুর ও লক্ষ্মীপুরে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, প্রিসাইডিং অফিসার ও এজেন্ট আটক, গ্রেফতার, সাজা প্রদান, জাল ভোট এবং ভোট বর্জনের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রচারণায় আচরণবিধি তোয়াক্কা করছে না কেউ। নেত্রকোনায় দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ঠাকুরগাঁওয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের নাম ব্যবহার করে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারুল ইসলামের পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের এক নেতার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি স্থানীয় সংসদের নাম ব্যবহার করে বলছেন- ‘আমি গণেশ রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক, রমেশ চন্দ্র সেনের খুব কাছের মানুষ, এমপির সন্তান রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথির নির্দেশে আমি আপনাদের কাছে বলতে চাই-রমেশ চন্দ্র সেনের একটাই মার্কা এবারের ২১ তারিখ নির্বাচনে মোটরসাইকেল মার্কায় মোশারুল ভাইকে চাই। এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে কমিশনের কাছে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য বলছেন, তিনি নিরপেক্ষ রয়েছেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনি হবেন উপজেলা চেয়ারম্যান। আগামী ২১ মে ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। ঠাকুরগাঁও সদরের চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন চারজন প্রার্থী। শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এক সভায় সদরের চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ভোটার ও প্রার্থীকে হুমকি দিচ্ছেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ভোটারদের উদ্দেশে বলছেন, ‘দিপু (বিল্লাল হোসেন) যদি আমাদের চন্দ্রপুর ঢোকে, ওরা যদি চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে আসে, ওগো দৌড়াইতে পারুম না? দৌড়াইতে পারবেন না? কালকে দিপুর বউ ভোট চাইতে আইছিল, অগো দৌড়াইয়া দিছে। আজ থেকে ওরা যাতে চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে না আইতে পারে। পারবেন? কোনো হুমকি-ধমকি মারবেন না। সামনা-সামনি মারবেন। স্পষ্ট কথা, দুই কূল রক্ষা কইরা চলবেন না। তলে-তলে খাতির রাইখেন না। তলে তলে খাতির রাখলে দিপুর মাইরও খাইবেন, আমাদের মাইরও খাইবেন। চন্দ্রপুর থেকে কাস্টিং ভোটের শতভাগ দিতে চাই।’ জানা গেছে, গত শনিবার রাতে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রিপন সরদারের বাড়িতে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই উঠান বৈঠকেই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন (দিপু) এবং ওই সভায় উপস্থিত ভোটারদের হুমকি দেওয়ার বক্তব্যটিই ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসির নির্দেশ : উপজেলা নির্বাচনে ভোটার বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদার করতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভায় এ নির্দেশনা দিয়েছে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। সভায় সারা দেশের মাঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়েছে ৮ মে। ওই ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৬.১০ শতাংশ। ভোটের হার কম হওয়ায় নানা সমালোচনার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের অন্যান্য ধাপে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কমিশন এমন নির্দেশনা দিয়েছে।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়গুলোতে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী পর্যায়ের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্বাচনি কার্যক্রম আরও গতিশীল করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৫৯টি উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৪টি উপজেলায় ৫ জুন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১টি ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। সারা দেশে মোট ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ৪৭৯টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করতে তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরে বেশকিছু নির্বাচন নানা কারণে বন্ধ রয়েছে। অবশিষ্ট ১৬টি উপজেলা পরিষদের মেয়াদপূর্তি না হওয়ায় পরবর্তীতে নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

সর্বশেষ খবর