সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
শরিক ও সমমনাদের সঙ্গে বসবে দুই দল

সমমনা দলগুলোকে সক্রিয় করবে বিএনপি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সমমনা দলগুলোকে সক্রিয় করবে বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলনে লক্ষ্য অর্জন না হওয়ায় ক্রমেই বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে সমমনা দলগুলোর। ১৩ জানুয়ারির পর দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির কোনো বৈঠক হয়নি। নির্বাচনের পর অনেকটাই ‘স্থবির’ হয়ে পড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন। কিন্তু সম্প্রতি এক দফার দাবিতে আবারও সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। রাজপথে শক্তি বাড়াতে তারা তাদের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমানোর জন্য লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শুরু করেছেন। গতকাল ১২-দলীয় জোট ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আজ জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক হবে। পর্যায়ক্রমে মিত্রদলের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে তাদের সক্রিয় করে বর্তমান সংসদ বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামবে বিএনপি। এ বিষয় জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেকে ভাবতে পারে বিএনপি ও বিরোধী দলের আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা সংগ্রাম আরও বেগবান করব। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারের পরাজয় হবে। বর্তমান সরকার বাধ্য হবে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে। জানা যায়, যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে আবারও রাজপথে সক্রিয় হতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে সমমনাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২-দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জোট নেতারা এতে অংশ নেন। বিকাল ৫টার পর এলডিপি নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠক হয়। এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়। বিএনপির মিত্রদলগুলোর নেতারা বলছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে সমমনা দলগুলো। এক দফার আন্দোলন ঘোষণার পর দলগুলোর মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়। তখন নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কর্মসূচি নির্ধারণের আগে দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হতো। নেতাদের মূল্যায়ন ছিল। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সঙ্গে সমমনাদের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা যোগাযোগ নেই। কয়েকটি দল ও জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখলেও ছোট দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না। এতে অনেকের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকারবিরোধী প্রতিটি কর্মসূচিতে সমমনা নেতারা অংশ নিয়েছেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভোট বর্জন আন্দোলনকে গতিশীল করতে ভূমিকা রেখেছেন। ১৩ জানুয়ারির পর লিয়াজোঁ কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। যুগপৎ কর্মসূচিতেও নেই। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় বেশ কয়েকটি দল একেবারেই নিষ্ক্রিয় ভূমিকায়। বিএনপির দায়িত্বশীলরা জানান, এক দফার দাবি ঘিরে আবারও সরব হচ্ছে বিএনপি। এর মধ্যে গত শুক্র ও শনিবার ঢাকায় বেশ বড় জনসমাবেশ করতে সক্ষম হয়েছে দলটি। সমাবেশের পর নেতা-কর্মীরা আরও উজ্জীবিত হয়েছে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। সামনে কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা ঠিক করতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি হাইকমান্ড থেকে সভা অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমানোর পাশাপাশি তাদের মাঠের আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চায় বিএনপি। সে জন্য দীর্ঘ চার মাস পর সমমনাদের সঙ্গেও ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, নেতা-কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে কর্মসূচি পালনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ জন্য কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সমমনাদের মতামত নেবে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আগামীদিনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করার আগেই সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেওয়া হবে। ‘শক্তি সঞ্চার’ করে এক দফা আদায়ে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আবারও একসঙ্গে মাঠে নামতে চায় বিএনপি।

সর্বশেষ খবর