সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে উত্তপ্ত রাবি

সংঘর্ষ অস্ত্রের মহড়া, ককটেল বিস্ফোরণ

রাবি প্রতিনিধি

মধ্যরাতে উত্তপ্ত রাবি

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ককটেল বিস্ফোরণ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়ায় এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। শনিবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান কর্মীদের নিয়ে অতিথি কক্ষে আলোচনা করছিলেন। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। আলোচনাকালে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হলের বর্তমান সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও তার অনুসারীরা কক্ষে আসেন এবং তাদের চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় সভাপতি প্যানেলের শতাধিক নেতা-কর্মী হলে আসেন এবং নিয়াজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এদিকে নিয়াজের নেতা-কর্মীরাও জড়ো হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। রাত ১২টার পর উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপক্ষ হলের ছাদে এবং অন্যপক্ষ হলের সামনে অবস্থান     নিয়ে ইটপাটকেল ও ককটেল ছুড়তে থাকে। এতে আল ফারাবি, শামসুল আরিফিন খান সানী, তাহসিন তানভির, জয়, হাসিবুল হাসিব, আবদুল্লাহ শুয়াইব ও শিবলী সাদিক আহত হয়েছেন। তারা সবাই ছাত্রলীগ কর্মী। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও রামদাসহ অস্ত্র হাতে আক্রমণ চলতে থাকায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা হলে। তখন পুলিশসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আহ্বানে টানা তিন ঘণ্টায় সংঘর্ষ পরিস্থিতি শান্ত হয়। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনার সুযোগে হলে বহিরাগত ও শিবির ঢুকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়েছে। এতে ছাত্রলীগের সাত কর্মী আহত হয়েছে। এ ঘটনার নেপথ্যে ছাত্রলীগের কয়েকজন জড়িত। যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।’ অভিযোগের ব্যাপারে নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ‘অতিথি কক্ষে সভাপতি প্যানেলের ১০-১৫ জন বসে ছিল। আমি ৫ মিনিটের জন্য কক্ষ থেকে তাদের বাহিরে যেতে অনুরোধ করি। সভাপতি প্যানেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আতিক ও অন্য নেতা-কর্মীরা আমার ওপর চড়াও হন এবং একপর্যায়ে মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করেন। তখন উভয়ের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এ ঘটনার জের ধরে বিভিন্ন হল থেকে সভাপতি প্যানেলের নেতা-কর্মীরা হলে আসেন এবং হলে ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিশৃঙ্খলা কখনই কাম্য নয়। আমরা এসব কর্মকান্ডে উদ্বিগ্ন। ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা নিরসনে আমরা তৎপর রয়েছি। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে আজই বসব এবং বিশৃঙ্খলায় সম্পৃক্তদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এদিকে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের এক কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। গতকাল সোহরাওয়ার্দী হলের গেটে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী কর্মচারীর নাম মনিরুল ইসলাম। তিনি হলের প্রহরীর দায়িত্বে আছেন। মনিরুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে আকাশ, সানিসহ বেশ কয়েকজন আমাকে মারধর করে। আমি নাকি নিয়াজ মোর্শেদকে সহযোগিতা করেছি, সেজন্য তারা আমাকে হাতে-গালে-মাথায় কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে। বিষয়টি হল প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। অভিযুক্ত হল ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান বলেন, ‘গতকাল হলে একটা ঝামেলা হয়। তখন এ কর্মচারী আমাদের বিভিন্ন তথ্য বহিরাগত ও শিবিরকে দিয়েছে। সেই তথ্য আমরা পেয়েছি। তাই তাকে সতর্ক করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘তাকে কেউ মারধর করেনি। বহিরাগতদের বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার জন্য নেতা-কর্মীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তখন প্রাধ্যক্ষ এসে তাকে নিয়ে গেছেন।’

সর্বশেষ খবর