রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সমস্যা কাটছে না তৃণমূলে

এমপি নির্বাচনে বিরোধ শেষ না হতেই বেড়েছে উপজেলা কোন্দল, সাংগঠনিক ভাবে এখনই পদক্ষেপ না নিলে প্রভাব পড়বে ইউনিয়ন পরিষদেও

রফিকুল ইসলাম রনি

সমস্যা কাটছে না তৃণমূলে

সমস্যা কাটছেই না আওয়ামী লীগের তৃণমূলে। মাঠপর্যায়ে বিভেদের দেয়াল বড় হচ্ছে। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে তা উপজেলা নির্বাচন ঘিরে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় দুই বলয়ে হাঁটছেন নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে রক্তারক্তি আর খুনোখুনির মতো নির্মমতার ঘটনা ঘটছে।

বিচ্ছিন্ন সংঘাত, হামলা, মামলা-পাল্টা মামলা দলে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমপি লীগ-ভাই লীগ বনাম আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে অস্থির, অশান্ত হয়ে উঠছেন টানা চারবারের ক্ষমতায় থাকা দলের নেতা-কর্মীরা। 

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানান, বিএনপির ভোট বর্জনের পটভূমিতে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার পর বিবাদে জড়ান স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনের পর বেশির ভাগ স্বতন্ত্র এমপি দলে ‘চালকের আসনে’ বসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আবার যারা এমপি হতে পারেননি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের এবং কর্মী-সমর্থকদের ‘সাইজ’ করার মিশনে নেমেছেন বিজয়ী নৌকার এমপিরা। হামলা-মামলা দিয়ে নাস্তানাবুদ করছেন। গ্রামের সামান্য

ঘটনাকেও থানায় মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন এমপিরা। উপজেলা নির্বাচন শুরু হওয়ায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংকট সমাধান না করলে আগামী বছর শুরু হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন নিজ দলের বিশৃঙ্খলা কঠিন হাতে দমন করতে হবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে। না হলে প্রতিপক্ষের প্রয়োজন হবে না, নিজ দলের মধ্যেই খুনোখুনি ও প্রাণহানির ঘটনা বাড়বে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, তারা তৃণমূলের সংকট চিহ্নিত করতে পেরেছেন। খুব শিগগিরই সমাধানের জন্য মাঠে নামবেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচনে যা হওয়ার হয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে কোনো অঘটন যেন না হয় সেজন্য কেন্দ্র থেকে একটি গাইড লাইন দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলে। এমপি-মন্ত্রীরা যাতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোথাও এর ব্যত্যয় ঘটছে। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছি, খুব শিগগিরই এর সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।  জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। বিশেষ করে শতাধিক সংসদীয় আসনে, যেখানে দলের প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল সেসব জায়গায়। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেটা আরও বেড়েছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্যদের রোষানলে পড়েছেন অনেক নেতা। ‘এমপি লীগের’ দাপটে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেক প্রার্থী। কেউ কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেও নিচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও ছড়ানো হচ্ছে ধর্মীয় উসকানি। এ নিয়ে একাধিক প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে।

দলীয় সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনের কারণে আওয়ামী লীগ সম্মেলন ও কমিটি গঠনের কাজ স্থগিত করেছে। এখন চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন চলছে। ইতোমধ্যে একটি ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। আগামী ২১ তারিখে দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে। এ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে। সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অধিকাংশ উপজেলায় ভোট হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা বনাম আওয়ামী লীগ নেতাই। সে কারণে নিজেদের ভিতরে জনপ্রিয়তা যাচাই হচ্ছে, প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সেখানে প্রতিহিংসা কেন হবে? সংঘার্ত-সংঘর্ষ কেন হবে? যারাই এ কাজের সঙ্গে জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলীয় ফোরামের বৈঠকে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তৃণমূলের একাধিক নেতা জানান, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় আগে থেকেই দল একাধিক বলয়ে বিভক্ত। গত সংসদ নির্বাচনের পর নতুন করে স্বতন্ত্র বনাম দলীয় এমপির বলয় সৃষ্টি হয়েছে। চলমান উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন করে কত যে গ্রুপ তৈরি হচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যেসব এলাকায় কখনোই বিরোধ ছিল না, সেসব এলাকায়ও গ্রুপিংয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মতো দলের নেতা-কর্মীকে ঘায়েল করা হচ্ছে। যারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অনেক দম্ভ! নেতা-কর্মীরা কোনো কাজে এমপিদের কাছে গেলে চরম দুর্ব্যবহার করেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও তারা কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ মাসে একবার নির্বাচনি এলাকায় গেলেও সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। ফলে নেতা-কর্মীরা একশ্রেণির এমপিকে দলীয় কর্মকান্ডে পান না।

সর্বশেষ খবর