সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

শঙ্কা সহিংসতার মধ্যে কাল ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক

শঙ্কা সহিংসতার মধ্যে কাল ভোট

শঙ্কা-সহিংসতার মধ্যে উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ কাল। ১৫৬ উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ ধাপে ২৪ উপজেলায় ইভিএমে ভোট হবে। এ ছাড়া বাকি উপজেলায় ব্যালটে ভোট গ্রহণ হবে। সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনি মাঠে রয়েছে ৬১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৪৫৮ প্লাটুন বিজিবি ও ৯০ হাজার পুলিশ। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১৬ উপজেলায় ২৫ প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি, র‌্যাবের ১৭টি টিম এবং কোস্টগার্ড মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দুর্গম এলাকার ৬৯৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের আগের দিন আজ ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। আর বাকি ১২ হাজার ৩২৩ কেন্দ্রে ব্যালট যাবে ভোটের দিন কাল সকালে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি (উপজেলায়) এলাকায় ভোটের দিন সাধারণ ছুটি রয়েছে। এদিকে ভোট নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের উৎসবের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে নির্বাচনি এলাকায়। গতকাল মধ্যরাতে প্রচার শেষ হয়েছে। প্রচরণা নিয়ে অনেক জেলায় সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। ফরিদপুরের ভাঙায় হামলা হয়েছে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর। ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী না দিলেও ভোটের মাঠে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেই। দ্বিতীয় ধাপে কয়েকটি উপজেলায় প্রার্থী দিয়েছে দুই-তিনটি রাজনৈতিক দল। এ ছাড়া সব প্রার্থীই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপির নেতারাও বেশকিছু উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।

ইসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলায় তফসিল দেওয়া হলেও দুটি উপজেলায় তিন পদেই বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া স্থগিত, আইনি জটিলতা ও ধাপ পরিবর্তনের কারণে তিনটিতে ভোট হচ্ছে না। ফলে কাল ভোট গ্রহণ হবে ১৫৬ উপজেলায়। এসব উপজেলায় মোট প্রার্থী ১ হাজার ৮২৪। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩, ভাইস চেয়ারম্যান ৬৯৩ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দ্বিতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২২ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে সাত, ভাইস চেয়ারম্যান আট এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন রয়েছেন। ইসি জানিয়েছে, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট বিজিবি মোতায়েন থাকবে ৪৫৮ প্লাটুন। সর্বমোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন ৮৯ হাজার ৮৬৩ জন। এর মধ্যে ভোট কেন্দ্রে থাকবেন ৪৭ হাজার ৮২৯; মোবাইল টিমে মোট থাকবেন ১৩ হাজার ৪৯০; স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন ৫ হাজার ৫৬৭ ও অন্যান্য ডিউটিতে থাকবেন ২৩ হাজার ৮৫২ জন। ভোট কেন্দ্রে এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ জন।

তিন দিন মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ

উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১৫৬ উপজেলায় তিন দিনের জন্য মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে গতকাল ১৯ মে মধ্যরাত থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছেন।                  অন্যদিকে নৌ-সচিবকে পাঠানো পৃথক এক চিঠিতে ভোটের দিন যন্ত্রচালিত নৌযান চলাচল বন্ধের জন্যও বলা হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফরিদপুর : ভাঙ্গায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মোখলেছুর রহমান সুমনের উঠান বৈঠকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গাড়ি, মাইক ও বেশ কিছু চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শনিবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ওয়াহিদুজ্জামান। নিজের জীবনের হুমকি, কর্মীদের নিরাপত্তা ও প্রভাবশালী একনেতার হুমকির কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের দুই কর্মীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। আহতরা হলেন- উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের তেকাটি গ্রামের ছামাদ ম লের ছেলে সালাম ম ল (৫৬) ও একই গ্রামের মৃত কাশেম ম লের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০)। শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের ভর্তি করা হয়।

বাগেরহাট : ফকিরহাট উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে মোটরসাইকেল প্রতীকের তিন কর্মীর বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগ উঠেছে ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বাগেরহাটের ডিবির এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গতকাল ইসি আহসান হাবিব খানের কাছে এ অভিযোগ দিয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যানপ্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি জানান, এ দুই কর্মকর্তা তার কর্মীদের কাছে গিয়ে বিপক্ষ প্রার্থী আনারস প্রতীকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন অন্যথায় বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে হুমকি-ধমকি দেন।

নাটোর : বাগাতিপাড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে দুই চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া দুটি নির্বাচনি ক্যা¤প ভেঙে ফেলাসহ কিছু সরঞ্জামাদিও জব্দ করা হয়। শনিবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার পাকা ইউনিয়নের একডালা বাজার ও মাকোপাড়া মোড়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া মমতাজ-এর ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অভিযান পরিচালনা করেন।

গোপালগঞ্জে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে মো. ওসিকুর ভুইয়া নামের এক যুবক নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ম্মারকলিপি পেশ করা হয়।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় গোপালগঞ্জ শহরের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলীর কর্মী-সমর্থক, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে বিক্ষুব্ধরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

এ সময় পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান লিটন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছবেদ আলী ভূইয়া, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম কবির, যুবলীগ নেতা জাহেদ মাহমুদ বাপ্পী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা।

দ্বিতীয় ধাপে ভোটার বাড়বে, আশায় ইসি : নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ভোটের হার কমার কয়েকটি কারণ রয়েছে। তবে ভোট কম পড়ার পেছনে একটি বড় ফ্যাক্টর বিএনপি। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোটের দুই দিন আগে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কত ভোট পড়বে তা বলা কঠিন। যেহেতু সব দল অংশ নিচ্ছে না। তাই ভোটের হার নিয়ে বলা যাবে না।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন ও প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে ছোটখাটো সমস্যা কাটিয়ে দ্বিতীয় ধাপের ভোট আরও সুষ্ঠু হবে বলে আশাবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এতে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে। গত ৮ মে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৩৬ শতাংশের কিছু বেশি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এত কম হারে ভোট এর আগে পড়েনি। ইসি মো. আলমগীর মনে করেন, ভোটের হার কমার কয়েকটি কারণ আছে। ভোট কম পড়ার পেছনে একটি বড় ফ্যাক্টর বিএনপি। তবে একমাত্র ফ্যাক্টর না। আরেকটা বড় কারণ হলো, স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাররা চাকরিস্থল থেকেও আসতে চায় না। এখন ৬০ শতাংশের বেশি ভোটাররা আসতে চায় না। এটা সারা পৃথিবীতেই এমন। ভারতে সব দল অংশ নিলেও ৬০ শতাংশ ভোট পড়েনি। ওই দিন (৮ মে) তাৎক্ষণিক কারণ ছিল সকালে বৃষ্টি। অন্যান্য কারণের মধ্যে ধান কাটা ছিল, বড় দল অংশ নেয়নি এসব কারণে ভোট কম পড়েছে। কাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে ১৫৭টি উপজেলায় যে ভোট হতে যাচ্ছে সেদিনও নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকবে বলে আশাবাদী নির্বাচন কমিশনার আলমগীর। তিনি বলেন, ছোটখাটো যেসব সমস্যা হয়েছে, সেগুলো যাতে না হয়, সেজন্য প্রশাসন ও পুলিশ অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। ভোটাররা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং বাধাহীনভাবে ভোট কেন্দ্রে যাবেন সেটা নিশ্চিত করা হবে। ভোটে যথেষ্ট সংখ্যক প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন মন্তব্য করে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, ভোটের উষ্ণ পরিবেশ রয়েছে। আমাদের বার্তা হচ্ছে- নির্বাচনটা আমরা শুধু মুখেই নয়, প্রমাণ করে দিয়েছি ৭ (জানুয়ারি) তারিখের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে, ৮ (মে) তারিখের উপজেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটারদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, কেন্দ্রে আসুক। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে নির্বাচন কমিশনের করার কিছু থাকে না বলেও মন্তব্য করেন মো. আলমগীর।

সর্বশেষ খবর