সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইতালির ভিসা সেন্টারে বিক্ষোভ হট্টগোল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিসার আবেদনসহ পাসপোর্ট ভিএফএস গ্লোবালে জমা দেওয়ার প্রায় এক বছরেও তা ফেরত পাননি প্রার্থীরা। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ ভিসা প্রার্থীরা ভিড় করেন রাজধানীর গুলশান-১ এ। সেখানে নাফি টাওয়ারে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভিসার আবেদনপত্র এবং পাসপোর্ট জমা নেওয়া প্রতিষ্ঠান ভিএফএসে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেন তারা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা শতাধিক বিক্ষুব্ধকে ভিতরে ডেকে নিয়ে নানা ধরনের আশ্বাস দেন। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, কর্মমুখী তরুণ-তরুণীদের ইউরোপের দেশ ইতালি এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে ভিএফএস গ্লোবালের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে। সরেজমিনে জানা যায়, ইতালির ভিসা আবেদন করার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। নাফি টাওয়ারে অবস্থিত ভিএফএস গ্লোবালে ইতালি ভিসা আবেদন কেন্দ্রে গতকাল তিন ঘণ্টায় অন্তত ৩ শতাধিক তরুণ-তরুণী বিভিন্ন তথ্য জানতে আসেন। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ এসেছিলেন ভিসা আবেদনের কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পেয়ে। তাদের মধ্যে অনেকে অন্তত দুই মাস আগে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য ইমেইলে আবেদন করেও কোনো তারিখ পাননি। আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ দেওয়া না হলেও তাদের ফিরতি কোনো ইমেইলও পাননি। কেউ কেউ এসেছিলেন ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার আট-নয় মাসেও পাসপোর্ট বা ভিসা না পেয়ে। ভুক্তভোগীরা ভিএফএস কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন প্রতিবেদকের কাছে। ভিএফএস কর্মকর্তাদের অপেশাদারসুলভ আচরণের অভিযোগ করে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। গতকাল বিকালে গুলশান-১ এ ইতালি ভিসা আবেদন কেন্দ্রে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে ভুক্তভোগীদের এমন দুঃখ-দুর্দশার চিত্র।

ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ভিএফএসের অসহযোগিতার কারণে বিদেশ যেতে আগ্রহী অনেক তরুণ-তরুণী হতাশ হয়ে পড়েছেন। অথচ ভিএফএসের সহযোগিতা পেলে দেশে আরও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব ছিল। ভিসার আবেদন করার পর প্রায় ৯ মাস হতে চললেও এখনো ভিসা বা পাসপোর্ট হাতে পাননি এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। কথা হয় আলী হোসেন নামে একজনের সঙ্গে। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। তিনি জানান, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। দীর্ঘ ৯ মাস হতে চললেও এখনো অনলাইনে ‘প্রসেসিং’ দেখাচ্ছে। এর বাইরে তিনি তার ভিসার ব্যাপারে কোনো তথ্যই পাচ্ছেন না। অথচ তার আত্মীয়স্বজন থাকেন ইতালিতে। তাদের মাধ্যমে স্পন্সর ভিসার আবেদন করেছেন তিনি। ভিসা আবেদনের খোঁজ নিতে গতকাল গুলশানের ওই অফিসে এলেও ভিএফএস কর্মকর্তারা তাকে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, রমজান মাসে এসে একবার খোঁজ নিয়েছিলাম। তখন এখান থেকে বলা হয়েছিল- গত বছরের আগস্ট থেকে ১ লাখের বেশি ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্ট আটকা আছে। আর এখন তো সেই সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে। আলী হোসেনের মতো আরও অন্তত পাঁচজনের ভাষ্য, ভিএফএস কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। নাফি টাওয়ারের লিফটের ৫-এ ভিএফএস গ্লোবালের ভিসার আবেদনপত্র জমা নেওয়া কেন্দ্রের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শতাধিক ভিসা প্রার্থী নানা উৎকণ্ঠা নিয়ে তথ্য জানতে অপেক্ষা করছেন। এরপর তাদের সবার সামনে ভিএফএসের এক কর্মকর্তা উপস্থিত হয়ে বলেন, আপনারা যারা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাননি, তারা ইমেইল করবেন। যারা পাসপোর্টসহ আবেদন জমা দিয়েছেন তাদের পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে এখানে কোনো তথ্য নেই। তাদের পাসপোর্ট পাওয়ার দিন-তারিখ মোবাইলে এসএমএস কিংবা ইমেইলে জানিয়ে দেওয়া হবে। উপস্থিত ব্যক্তিদের এসব জানিয়ে সবাইকে একে একে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলেন ভিএফএসের ওই কর্মকর্তা। এর আগে ২৩ এপ্রিল সকালে গুলশানে ইতালি দূতাবাসের সামনে শত শত ইতালি গমনেচ্ছু কর্মী মানববন্ধন করেন। তবে পুলিশের বাধায় দূতাবাসের সামনে তাদের বেশি সময় থাকতে দেওয়া হয়নি। ওইদিন ভিসা প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার ইতালি দূতাবাসে ভিএফএস কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আটকে আছে ইতালি যেতে আগ্রহী কর্মীদের পাসপোর্ট। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। আবার অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের কাজ ছেড়ে ইতালি যাওয়ার আশায় দেশে ফিরে ভিসা নিয়ে দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেন। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। জানা যায়, অনেক কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতেন। ইতালি যাওয়ার ইচ্ছায় তারা দেশে ফেরেন। ইতালি থেকে স্পন্সর ভিসা নিয়ে ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে তারা ইতালি দূতাবাস বরাবর পাসপোর্ট জমা দেন। কিন্তু দেড়-দুই বছর পার হলেও তারা পাসপোর্ট, ভিসা কোনোটাই পাননি। এতে বেশির ভাগ কর্মীর ইতালির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেকের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ভিসার মেয়াদও শেষের পথে। এদিকে গুলশান-২ এর ডেল্টা লাইফ টাওয়ারে অবস্থিত ভিএফএসে ডেনমার্ক, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, কানাডার ভিসা আবেদন করার কেন্দ্র। এ ছাড়া আমেরিকান ভিসা সংগ্রহ কেন্দ্র ও অস্ট্রেলিয়ান বায়োমেট্রিক সংগ্রহ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয় ওই ভিএফএস সেন্টার। প্রতিদিন হাজারো ভিসা প্রার্থী এখানে এলেও তাদের জন্য নেই সঠিক কোনো ব্যবস্থাপনা। প্রচ- দাবদাহের মধ্যে দাঁড়াতে হয় ভিসা প্রার্থীদের। সবচেয়ে ভোগান্তি হয় কানাডার ভিসা আবেদনকারীদের। এই প্রার্থীদের বাইরে রোদে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করে ভিতরে প্রবেশ করার পর নির্ধারিত কক্ষে অপেক্ষা করতে হয় দুই থেকে প্রায় চার ঘণ্টার মতো। নির্ধারিত চার্জ প্রদানসাপেক্ষে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার প্রিমিয়াম সুবিধার আয়োজন থাকলেও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভিসা আবেদনকারীদের প্রিমিয়াম চার্জ দিতে অনেকটা বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর