সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শিল্প খাত পরিবেশ বান্ধব করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিল্প খাত পরিবেশ বান্ধব করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশে শিল্প খাত পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত। এসব মাথায় রেখেই শিল্প খাত তৈরি করতে হবে। শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবাইকে করতে হবে। সামান্য একটু কেমিক্যাল ব্যবহারের ওই পয়সাটা বাঁচাতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ, সঙ্গে সঙ্গে নিজের সর্বনাশটা কেউ করবেন না।

গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপণ্য (এসএমই) মেলা-২০২৪’-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২৩’ বিজয়ী সাতজন মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান।

২০২৩ সালের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী এসএমই উদ্যোক্তাদের পক্ষে ‘রংপুর ক্রাফটস’-এর স্বত্বাধিকারী স্বপ্না রানী সেন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় প্রণীত ২০২৪ থেকে ২০২৮ কর্মপরিকল্পনার ওপর রচিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে ‘এসএমই মেলা ২০২৪’-এর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। উদ্বোধনী পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

এবারের মেলায় অংশ নেওয়া সাড়ে তিন শ-এর বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এ ছাড়া ৩০টি ব্যাংক, ১৫টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস ক্লাবসহ আরও প্রায় ৫০টি উদ্যোক্তা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করছে। আগামী ২৫ মে শনিবার পর্যন্ত চলমান এই মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। এক সময় এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই বড় হবে। তারা উপকৃত হবে, দেশ উপকৃত হবে। কোনো মতে পাস করেই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সরকার নানান সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এসব সুবিধা আমাদের ছেলেমেয়েদের নিতে হবে। নারী উদ্যোক্তা আরও বাড়াতে হবে। নারীদের আরও বেশি সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে নারী-পুরুষ সমান তালে এগিয়ে যাবে। নারীদের গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে।

আমাদের দেশ ‘ভৌগলিক সীমারেখায় ছোট এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বড়’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের দেশের পরিবেশ ও সবকিছু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ুর অভিঘাতে যেন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি বলেন, যারা যেখানেই কোনো শিল্প গড়ে তুলবেন সেখানে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন আপনার এই শিল্পের এই বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে, আমাদের পানি যেন কোনোভাবে দূষণ না হয়, মাটিতে দূষণ যেন না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুব আনন্দিত, কেননা আজকের এসএমই পণ্য মেলায় দেখা যাচ্ছে উদ্যোক্তা ৬০ শতাংশই নারী। তিনি নারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সমাজের একটা অংশকে বাইরে রেখে সেই সমাজ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের দেশের নারী-পুরুষ সবাইকে যদি আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারি তাহলে সমানভাবে দেশটা দ্রুত উন্নত হবে। এজন্য নারী উদ্যোক্তা আমাদের দরকার। যেহেতু শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সে ক্ষেত্রে পুরুষরা ঘরের নারীদের (স্ত্রী-কন্যা-বোন) নামে, তাদের সঙ্গে নিয়ে এখানে যুক্ত হতে পারেন। কেননা অন্যত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না। কাজেই পুরুষরা বিশেষ করে আমাদের যুবসমাজ এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন। কারণ আমরা চাই আমাদের শিল্প খাতে আরও উদ্যোক্তার সৃষ্টি হোক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সুচকে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা বিএনপির শাসনামলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার। সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করায় আজকে পদ্মার ওপারেও বিশাল কর্মক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মার ওপারে যে জেলা বা ইউনিয়নগুলো রয়েছে সেখানকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। সেখানেও বিনিয়োগের বিরাট সুযোগ এসে গেছে। এসব এলাকায় ‘এসএমই’ (ফাউন্ডেশন) আরও বেশি কাজ করতে পারে এবং এখানে অনেক উদ্যোক্তার সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি শিল্প ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মাথায় রেখে আমাদের আরও উদ্যোক্তা এবং কাজের লোক প্রয়োজন পড়বে। আমাদের দেশের মানুষকে কাজ দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যখন পদক্ষেপ নেব সে সময় বিশেষ করে শিল্প মন্ত্রণালয় ও এসএমই ফাউন্ডেশনকে খেয়াল রাখতে হবে যে শ্রমঘন শিল্প যেন আমাদের দেশে গড়ে ওঠে। শ্রমবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমিকদের বিষয়ে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। আপনি যদি বেশি কাজ চান তাহলে তাদের সেই কর্মপরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। তিনি বলেন, শুধু হুকুম দিয়ে হয় না। হুকুম দিয়ে যা অর্জন করতে পারবেন, ভালোবাসা দিয়ে পারবেন তার চেয়ে অনেক বেশি। আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে আরও বেশি আপনি কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। সেদিকে অবশ্যই সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এসএমই খাতের উন্নয়নে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বে ভোক্তাদের চাহিদানুযায়ী শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে আরও মনোনিবেশ করতে হবে। কেননা এখন ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির যুগ। সে ভাবেই বহির্বিশ্বে আমাদের দূতাবাসগুলোকে নির্দেশনা  দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আশবাদ ব্যক্ত করেন, এই এসএমই পণ্য মেলার মাধ্যমে দেশের মানুষ আরও জানতে পারবে এবং উৎসাহিত হবে। আরও উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং এই মেলার মাধ্যমেই আমাদের এসএমই ফাউন্ডেশন আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। ফলে বিদেশে পণ্য রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে এবং দেশেও আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস দেশীয় এসএমই শিল্পের উন্নয়নে এই মেলা ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক মাত্রা পাবে এবং এর ফলে দেশীয় পণ্যের প্রসারও ঘটবে। নতুন নতুন শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে বলেও আমি বিশ্বাস করি।

সর্বশেষ খবর