সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
হাঙ্গেরির ভিসায় সিন্ডিকেট

টাকা দিলে হয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

যশোরের হেমা রানী দাস স্বামীর কাছে যাবেন হাঙ্গেরি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত বছরের ডিসেম্বরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অনুমোদন পেয়েছেন তার স্বামী। কিন্তু এরপর থেকে শুরু হয়েছে তার অপেক্ষা। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে শুধু ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন হেমা রানী দাস। ঢাকার ভিএফএস গ্লোবালের অফিসে আসা-যাওয়ার মধ্যেই কাটছে তার দিন। চট্টগ্রামের রিপন সরদার থাকেন দুবাই। সেখান থেকেই ছোট ভাইয়ের জন্য হাঙ্গেরির ছয় মাসের ওয়ার্ক পারমিট জোগাড় করেন। রিপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে অভিযোগ করেন, ছয় মাসের পারমিটের মেয়াদ শেষ হতে আর বাকি আছে ১৫ দিন। কিন্তু ভিসার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়নি এখনো। এজন্য হাঙ্গেরির কোর্টে ভিএফএসের বিপক্ষে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দাবি করেন রিপন সরদার। চাঁদপুরের নজরুলের অভিযোগ, পাঁচ মাস আগে ভিসার জন্য ভিএফএস সেন্টারে আবেদন জমা দেওয়ার পর জানানো হয় ভিসা হয়নি। পরে দিল্লিতে হাঙ্গেরি দূতাবাসে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় দূতাবাসে আবেদন জমাই হয়নি। এ ছাড়াও হাঙ্গেরির ভিসা নিয়ে ভিএফএস গ্লোবালে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য দিনের পর দিন ঘোরানোর অভিযোগ করেছেন ঢাকার দোহারের মহসিন, কুমিল্লার জসীম ও বগুড়ার জাহিদ। রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে ভিএফএস গ্লোবাল থেকে পাওয়া যায় ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট।

রিক্রুটিং এজেন্সি গ্লোবাল জবসের মালিক এহসানুল আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাঙ্গেরির ভিসার জন্য ভিএফএসে গেলেই বলে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ডেট খালি নাই। কিন্তু সেখানে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এই সিন্ডিকেটকে টাকা দিলেই পাওয়া যায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট। জনপ্রতি ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার ঘটনাও আছে। এভাবে শতকোটি টাকা লুটে নিচ্ছে ভিএফএস-কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট। আবার টাকা নিয়ে এই চক্র অনেক সময় ফলস অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়। এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট না দেওয়া এবং ফলস অ্যাপয়েন্টমেন্টের কারণে ভিসা নষ্ট হয়ে যায় অনেকের।

হাঙ্গেরির পাশাপাশি ইতালির ভিসার ক্ষেত্রেও ভিএফএস গ্লোবালের কর্মীদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার অভিযোগ আছে। তাহমিনা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসেন বাবুল বলেন, ভিএফএসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দিন মাস বছর যায়, তবুও কাগজপত্র জমা দেওয়ার তারিখ পাওয়া যায় না। ইমেইল পাঠানো হলে একটা অটোমেটিক রিপ্লাই দেয়। আর কোনো উত্তর দেয় না। এভাবে হাজার হাজার প্রবাসীকে হয়রানি করা হচ্ছে। বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরে আবেদন করেও আগে ছবি তুলে, আঙুলের ছাপ দিয়ে আসছে। অথচ তিন মাস আগে আবেদন করেও তারিখ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, কাগজ আসল না নকল সেটা দূতাবাস বুঝবে। ভিএফএস কেন মাসের পর মাস ঘোরাবে। ইতালির জন্য এপ্রিল মাসে নুলাস্তা বের হয়েছে এখনো কাগজপত্র জমা দিতে পারেনি। আবার অনেকেই মে মাসে নুলাস্তা বের করে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। কীভাবে সম্ভব, টাকা দিলে সবই হচ্ছে ভিএফএসে। এমন অনিয়মের শত শত প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ওভারসিজের প্রোপ্রাইটর আলী আক্কাস আপন বলেন, প্রবাসীরা কাগজপত্র জমা দিয়ে কাক পাখির মতো অপেক্ষা করে, কবে ভিএফএস থেকে ডাক আসবে। মাসের পর মাস অপেক্ষায় যায়, কিন্তু ভিএফএস থেকে আর মেইল, এসএমএস আসে না। ইমেইল করলেও জবাব দেয় না। ভিএফএসে ইতালি প্রবাসীদের আঙুলের ছাপ দেওয়ার তারিখ পাওয়া অনেক জটিল। তবে যারা টাকা দিতে পারে, তারা দ্রুত তারিখ পেয়ে যাচ্ছে। আমরা সৎভাবে ব্যবসা করতে চাই। ভিএফএসের হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।

সর্বশেষ খবর