শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা অনাদায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা অনাদায়ী

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরাসরি খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। পুনঃতফসিলসহ মন্দ ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৩২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলার বিপরীতে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা আটকে আছে। যার বড় অংশ ফেরত আসবে না। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সামনে কী’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন একটা সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়েছে। আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া আছে, কিন্তু তার অভাব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সকালে এক রকম নিয়ম করে, আবার বিকালে আরেকজনের কথায় তা পরিবর্তন করে। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বসে। সাবেক এ গভর্নর বলেন, সুদহার ও ডলারের দর অনেক আগে বাড়ানো দরকার ছিল। তা না করায় মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, ডলারের দর বাড়িয়ে কিংবা সুদহার বাড়িয়ে বা ‘ক্রলিং পেগ’ করে দেশ উন্নত হবে না। এজন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষিতে ঋণ বাড়াতে হবে। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোর সব তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ পাচ্ছে না। যতটুকু প্রকাশিত হয়, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে, তথ্যের দরজা ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া। আমরা তথ্যের জন্য মিডিয়ার ওপর নির্ভর করতাম, তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তথ্যের অভাবের কারণে ভুল নীতি গৃহীত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্যের মূল নিয়ামক হচ্ছে খেলাপি ঋণ। তার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। এ খাতে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকিং খাত এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণ খেলাপির বড় অংশই ইচ্ছাকৃত। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, কিন্তু তা ফেরত দেওয়ার কোনো দায়বদ্ধতা তাদের ভিতরে কাজ করে না। অন্যদিকে কিছু গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিনিয়ত তা পরিশোধ করছে। এ ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ থেকে উত্তরণে ব্যাংকিং কমিশন তৈরি করে ব্যাংকিং খাতে ‘শিষ্টের পালন ও দুষ্টের দমন’ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে। ব্যয় বৃদ্ধির জন্য সুদের হারকে দায়ী করা হলেও খেলাপি ঋণের বিষয়টি আলোচনায় আসে না। সচরাচর সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেশি থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পাল্লা দিয়ে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এর ফলে ব্যাংকে প্রভিশনিং ঘাটতির পাশাপাশি তারল্যের সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত প্রসঙ্গে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ চাপিয়ে দেওয়ার কোনো বিষয় নয়। সবার আগে ব্যাংকগুলোর সঠিক আর্থিক অবস্থা নির্ধারণ করতে হবে। এরপর সেই দুর্বল ব্যাংক কেউ কিনবে কিনা তা দেখা উচিত। অনেক দেশেই ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হলে অন্য ব্যাংককে তা কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কোথাও জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় না। কারণ দুটি ব্যাংক যোগ করে দিলেই হবে না। যারা চাকরি করছেন তাদের জব ইন্টিগ্রেশন, জব কালচার, প্রফেশনাল কালচার, টেকনোলজি ইন্টিগ্রেশন, তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোয় ব্যাপক অনিয়মের কারণে সব সূচকে অবনতি হচ্ছে। মালিকানা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতিও খারাপ হয়েছে। বিকল্প না থাকায় সাধারণ মানুষ ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা রাখতে বাধ্য হচ্ছে। আর্থিক অবস্থা ব্যাপকভাবে খারাপ হওয়ায় খাতটির ওপর গ্রাহকদের আস্থা কমছে।

সর্বশেষ খবর