ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ লোকসভা নির্বাচনে ষষ্ঠ দফা ভোট গ্রহণ করা হবে কাল শনিবার। এদিন যে ৫৮ আসনে ভোট হবে, তার মধ্যে রয়েছে রাজধানী দিল্লির সাতটি। কৌতূহলীরা জানতে চাইবেন, কারা বসতে চলেছে এ সাতটি আসনে। নজর থাকবে দিল্লির এ সাতটি আসনের প্রতি। এ সাতটি আসন হলো-চাঁদনী চক, উত্তর-পূর্ব দিল্লি, পূর্ব দিল্লি, নিউ দিল্লি, উত্তর-পশ্চিম দিল্লি, পশ্চিম দিল্লি ও দক্ষিণ দিল্লি। এবার প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিজেপি। তবে এবারের নির্বাচনে মীনাক্ষী লেখি, হর্ষ বর্ধন, পরভেশ সাহিব সিং, রমেশ বিধুরি, গৌতম গম্ভীর ও হন্স রাজ হন্স-বিজেপি এ পাঁচ জয়ী এমপির কাউকেই প্রার্থী করেনি। অন্যদিকে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতার কারণে তিনটি আসনে কংগ্রেস এবং চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে আপ। এ নির্বাচনেই লড়াইয়ে হাতেখড়ি হতে চলেছে সাবেক কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মেয়ে বাঁশুরি স্বরাজের। তিনি নিউ দিল্লি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ সিনিয়র আম আদমি পার্টি (আপ) নেতা সোমনাথ ভারতী। এ আসনে গত দুবার বিজয়ী হয়েছিলেন মীনাক্ষী লেখি। চাঁদনী চক আসনে বিজেপির প্রার্থী কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি)-এর সেক্রেটারি প্রবীণ খান্ডেলওয়াল। এ আসনে দুবারের বিজয়ী সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। এখানে খান্ডেলওয়ালের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের জে পি আগরওয়াল। ২০১৯ সালের নির্বাচনে আগরওয়ালকে ২.২৮ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন হর্ষ বর্ধন।

একইভাবে, পশ্চিম দিল্লি আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী করা হয়েছে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র কমলজিৎ সেহরাওয়াতকে। এ আসনের বিদায়ী সংসদ সদস্য পরভেশ সাহিব সিং ভার্মার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন কমলজিৎ। এখানে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ আপ প্রার্থী মহাবল মিশ্র। ২০১৯ সালে এ মহাবাল মিশ্রকে ৫.৭৮ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন পরভেশ সাহিব সিং। দক্ষিণ দিল্লি আসনে দুই মেয়াদের এমপি রমেশ বিধুরিকে এবার প্রার্থী করেনি দল। তাঁর জায়গায় প্রার্থী হয়েছেন দিল্লি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা রামবীর সিং বিধুরি। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ আপ প্রার্থী শাহি রাম পেহেলওয়ান। গত লোকসভা নির্বাচনে আপ প্রার্থী রাঘব চাড্ডাকে ৩.৬৭ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন রমেশ বিধুরি।

উত্তর-পশ্চিম দিল্লি আসনে এবার বিজেপি প্রার্থী করেছে উত্তর দিল্লি মিউনিসিপালিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র যোগেন্দ্র চান্ডোলিয়াকে। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের উদিত রাজ। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির হন্স রাজ হন্স ৫.৫৩ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন আপ প্রার্থী গুগন সিং রাঙ্গাকে।

তবে একমাত্র উত্তর-পূর্ব দিল্লি আসনে দুবারের জয়ী সংসদ সদস্য মনোজ তিওয়ারিকে ফের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিশিষ্ট ভোজপুরি অভিনেতা ও গায়ক ৫৩ বছর বয়সি মনোজ টানা তৃতীয়বারের জন্য এ আসনে লড়ছেন। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের কানাইয়া কুমার। এ আসনে ২০১৯-এর নির্বাচনে মনোজ ৩.৬৬ লাখের বেশি ভোটে কংগ্রেস নেত্রী শীলা দীক্ষিতকে পরাজিত করেছিলেন।

দিল্লির প্রতিটি লোকসভা আসনেই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ আপ এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থীরা। গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার যথেষ্ট কমেছে। আবার দিল্লিতে কখনই লোকসভা আসনে জয়ের মুখ দেখেনি আপ। কিন্তু এবারে চিত্রটা একটু আলাদা। এ নির্বাচনে প্রধান ইস্যু আবগারি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী মনিশ শিসোদিয়ার জেলে যাওয়া। নির্বাচনি প্রচার শুরু থেকেই কেজরিওয়ালের গ্রেফতার ইস্যুতে সরগরম করেছেন আপসহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা। এবারে নিজে নির্বাচনে গণতন্ত্র রক্ষা করতে, সংবিধান রক্ষা করতে বিরোধী জোটের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আপ প্রার্থীরা।

এ নির্বাচনে দিল্লিতে সবচেয়ে বিত্তবান প্রার্থী বিজেপির মনোজ তিওয়ারি। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ২৮.০৫ কোটি রুপি। নির্বাচনি হলফনামায় এ তথ্য এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ দিল্লি আসনে বিজেপি প্রার্থী ৭১ বছর বয়সি রামবীর সিং বিধুরির সম্পত্তির পরিমাণ ২১.০৮ কোটি রুপি। তৃতীয় স্থানে পশ্চিম দিল্লি আসনে আপ প্রার্থী মহাবল মিশ্রর সম্পত্তির পরিমাণ ১৯.৯৩ কোটি রুপি। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন নিউ দিল্লি আসনে বিজেপি প্রার্থী বাঁশুরি স্বরাজ, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৯ কোটি রুপি। বিত্তবান প্রার্থীর তালিকায় পঞ্চম স্থানে থাকা নিউ দিল্লি আসনে বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী রাজ কুমার আনন্দের সম্পত্তির পরিমাণ ১৭.৮৭ কোটি রুপি। এ ছাড়া চাঁদনী চক আসনে বিজেপি প্রার্থী প্রবীণ খান্ডেলওয়ালের সম্পত্তির পরিমাণ ৬.৬২ কোটি রুপি, উত্তর-পূর্ব দিল্লি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কানাইয়া কুমারের সম্পত্তির পরিমাণ ১০.৬৫ লাখ রুপি।