শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

জোটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে শরিকদের প্রশ্ন

রফিকুল ইসলাম রনি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে শরিকরা প্রশ্ন তুললেন জোটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে। শরিক দলের নেতাদের প্রশ্ন জোটের কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে কি না? জোট কোন পথে? জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, জোটের প্রাসঙ্গিকতা আছে বলেই ডেকেছি। জোট ছিল, জোট আছে, থাকবে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জোটের শরিকরা মন খুলে কথা বলেন। জোট প্রধান শেখ হাসিনাও তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাদের কথার উত্তর দেন। বৈঠক প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে।

প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের সময় জোট থেকে আমাদেরকে প্রার্থী করা হলো। সেখানে আবারও আওয়ামী লীগের নেতা আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাক্ষাৎ করতে পারলাম না। নির্বাচন হয়ে গেল, এরপরও দেখা করব, তাও হলো না। এখন আমার প্রশ্ন জোটের প্রাসঙ্গিকতা আছে কি না? জোটের গতিবিধি কোন পথে? আপনি যেভাবে বলবেন, সেভাবেই হবে। আপনার মুখ থেকে আমরা শুনতে চাই। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জোটের প্রাসঙ্গিকতা আছে বলেই আপনাদের ডেকেছি। জোট থাকবে না কেন? ছিল, আছে, থাকবে।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, জোটের প্রার্থী করে লাভ কী হলো? সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হয়ে গেলেন। আমাকে নৌকার লোকের বিরুদ্ধে ভোট করতে হলো। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বললেন, জোট নেই। এখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা-এমপি-মন্ত্রীরা বলেন, জোট নেই, তখন তো প্রশ্ন থেকেই যায়, জোটের গতি কোন পথে? এখন আপনার কাছেই সমাধান চাই। জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন নিয়ে তো নানামুখী ষড়যন্ত্র ছিল। নির্বাচন বানচাল করার বড় চক্রান্ত ছিল। শুধু কি তাই? নির্বাচন ঠেকানোই নয়, আমার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র ছিল। আমাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত ছিল। আমি এসব পরোয়া করি না। আমি দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাব। জোটের কার্যকারিতা আছে। আপনারাই ছিলেন, আপনারাই থাকবেন। একসঙ্গেই আমরা থাকব।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা-মন্ত্রীরা বলেন, বাম দলের ভোট নেই। আমাদের নিজস্ব কোনো ভোট নেই। আমাদের যদি ভোট না থাকে, তাহলে কল্যাণ পার্টির জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কি ভোট আছে? সে ইবরাহিম কীভাবে কক্সবাজার থেকে এমপি হয়ে আসে? তার কত ভোট? আমাদেরকে বলেন, শক্তি বাড়াতে? কীভাবে শক্তি বাড়াব? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তেমন কোনো কথা বলেননি বলে জানা গেছে।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় এক কিংস পার্টির নেতাকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কলকাঠি নাড়া শুরু করলেন। আমিও নির্বাচনের আগে কোনো কথা বলিনি। কারণ আমি চাই জোটের ঐক্য থাকুক। কিন্তু কিছু নেতা তো চান না ১৪-দলীয় জোট থাকুক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিংস পার্টির কথা বলছেন, আপনার আসনে তো আপনার ভাতিজা প্রার্থী হয়েছিল। হাসতে হাসতে বলেন, পরিবার ঠিক রাখতে পারেন না, এটাও কি আমাদের দোষ?

এ সময় জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, গণতন্ত্রী পার্টির (একাংশ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহিদুল্লাহ সিকদারও তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

আজকের পর ১৪ দলে আর দূরত্ব থাকবে না : এদিকে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাড়ে তিন ঘণ্টা তাদের বক্তব্য শুনেছেন। যার যা বলার সবাই বিস্তারিত বলেছেন। এতে ১৪ দলের যে দূরত্বের কথাটা বলা হয় সেটা আর থাকবে না।

সর্বশেষ খবর