শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেশের অর্ধেক মানুষ বিদ্যুৎহীন

মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বিঘ্ন

জিন্নাতুন নূর

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের ২ কোটি ৭০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩১ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থার মধ্যে পড়েন। মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭০ লাখ। এ হিসাবে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখন বিদ্যুৎহীন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রিমালের প্রভাবে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ৪৫ জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্কেও বিঘ্ন ঘটছে। গতকাল রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধও রাখা হয়েছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, তার ছিঁড়ে এবং সঞ্চালন লাইনে গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পিডিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা উপকূলীয় এলাকায় বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দেশের প্রায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভৌগলিক এলাকার ৬৫টিতেই গ্রাহক সংযোগ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। ৩০টি সমিতির তথ্য অনুযায়ী, পোল নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ৭১৭টি, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ২৩৫৩টি, স্প্যান (তার ছেঁড়া) ৭১ হাজার ৭২৯টি, ইন্সুলেটর ভাঙা ২২ হাজার ৮৪৪টি, মিটার নষ্ট হয়েছে ৫৩ হাজার ৪২৫টি। সার্বিকভাবে পল্লী বিদ্যুতে (আরইবি) প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)-এর প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য হলো- পোল নষ্ট হয়েছে ২০টি, হেলে পড়েছে ১৩৫টি, বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে ২৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার, ১১ কেভি পোল ফিটিংস নষ্ট হয়েছে ১৪২ সেট, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১২টি, ১১ কেভি ইন্সুলেটর নষ্ট হয়েছে ১৩৪টি। সার্বিকভাবে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকার। গতকাল বেলা ৫টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎবিহীন ওজোপাডিকোর গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ জন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশালের অধিকাংশ গ্রাহক এবং ফেনী, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আংশিক বন্ধ রয়েছে। এলাকা ভেদে ১০ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না এসব এলাকার গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মুখপাত্র শামীম হাসান বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গতকাল বিকালে বিদ্যুতের উৎপাদন ৪ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদা বাড়লে আমরাও বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করব। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আমরা এখন কম লোডে চালাচ্ছি। আরইবি, ওজোপাডিকো এবং নেসকোর আওতাধীন এলাকাগুলোয় গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি.-এর প্রধান প্রকৌশলী বি এম মিজানুল হাসান বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ায় খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ৪ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে আসে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়, রাত পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় চলমান থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ সরেজমিন পরিদর্শন করে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের প্রাথমিক ধারণা তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তদারকি করা হচ্ছে। জেলা পর্যায় এবং সমিতিভিত্তিক কন্ট্রোল রুম রয়েছে। পরিবহন ঠিকাদারকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। ওজোপাডিকো ও আরইবি এলাকায় সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় মালামাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝড় বা বাতাস কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে।

৪৫ জেলার মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের ৪৫ জেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ৮ হাজার ৪১০টি সাইটে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অচল হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। কমিশন গতকাল সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার দরুণ মোবাইল অপারেটরদের সাইটগুলো থেকে দুর্যোগকবলিত এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম ও তাদের সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে জনসাধারণের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ সম্ভব হবে না।

সর্বশেষ খবর