বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিপুল মানুষ এখনো অন্ধকারে

রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যুৎহীন ৬১ লাখ গ্রাহক, প্রাথমিক ক্ষতি ১০৮ কোটি ৪০ লাখ, ইন্টারনেট-টেলিযোগাযোগ সেবায় বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবের দুই দিন পরও বিদ্যুৎহীন দেশের ৬১ লাখ গ্রাহক। বিদ্যুতের অভাবে এসব গ্রাহক পড়েছেন মহাদুর্ভোগে। ঘরে জ্বলছে না আলো। বিদ্যুতের অভাবে অনেক বাড়িতে চলছে না পানি তোলার মোটর। এতে বিশুদ্ধ পানির অভাবও দেখা দিয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের অর্ধেকের বেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার বা সাইট অচল হয়ে আছে। মোবাইল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি বিটিসিএল এবং আইএসপির গ্রাহকরা মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখনো ৬১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছেন। এর আগে প্রতিকূল আবহাওয়ায় মোট ৩ কোটি ৩ লাখ ৯ হাজার ৭০২ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে ২ কোটি ৪২ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা হয়। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ৮৫ ভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। আজ বুধবার সকালের মধ্যেই ৯০ ভাগ গ্রাহককে বিদ্যুতের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ বুধবার ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইন চালুর মাধ্যমে ৯০ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য চেষ্টা করা হবে। বাকি গ্রাহকের সার্ভিস ড্রপ ও মিটার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের পর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)-এর আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা এখন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। ঝড়ে আরইবির ৭৬৬টি ৩৩ কেভি ফিডারের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে ঠিক করা হয়েছে ৪৫৫টি। ১১০৫টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে ৬৫৪টি ঠিক করা হয়েছে। ৬২৩৫টি ১১ কেভি ফিডারের ক্ষতি হয়েছে। ঠিক করা হয়েছে ২৩৮৪টি। ৩৮৩৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ঠিক করা হয়েছে ২৫৬৭টি। বিতরণ ট্রান্সফরমারের ক্ষতি হয়েছে ২৮১৮টি। ঠিক করা হয়েছে ১৬৯৬টি। তার ছেঁড়া স্প্যান (কিমি.) ৩০৫৬। ঠিক করা হয়েছে ১৩৬৩ কিমি.। ইন্সুলেটর ক্ষতি হয়েছে ২৪ হাজার ২৫৮টি। ঠিক করা হয়েছে ৭৭২৫টি। মিটার ক্ষতি হয়েছে ৫৯ হাজার ৩৯৯টি। ঠিক করা হয়েছে ৩০ হাজার ৯৩৩টি। প্রাথমিক তথ্যানুসারে রিমালের জন্য আরইবির ১০৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে আরইবির ঠিকাদার ও জনবলসহ ৩০ হাজারের অধিক জনবল মাঠে কাজ করছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)-এর ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৫৪ জন গ্রাহকের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যুতায়িত গ্রাহক সংখ্যা ১৪ লাখ ৩ হাজার ৫২৬ জন। এর বাইরে আরও ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬২৮ জন গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছেন। প্রাথমিক তথ্যানুসারে ওজোপাডিকোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ টাকা। 

ইন্টারনেট-টেলিযোগাযোগ সেবায় বিপর্যয় : রিমালের তান্ডবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের অর্ধেকের বেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার বা সাইট অচল হয়ে আছে। মোবাইল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি বিটিসিএল এবং আইএসপির গ্রাহকরা মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। গতকাল সকাল ১০টার তথ্য দিয়ে প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, সারা দেশে মোট ৫৮ হাজার ২৯৮টি মোবাইল অপারেটরের টাওয়ারের মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৬টি টাওয়ার অচল হয়ে আছে। যা শতকরা হিসাবে ৫৬ শতাংশ। বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই সাইট অচল হয়ে যাওয়ার কারণ হলো দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা। মোবাইল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিটিআরসিতে আইএসপি অপারেটরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, উপকূলীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় ৩ লাখ আই স্পিকার ফিক্সড ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উপকূল এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়া, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ঘূর্ণিঝড়ে ইন্টারনেট ক্যাবলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর ১০০-এরও বেশি আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ১৯টি, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডের ২৯৬টি, ফাইবার এট হোমের ২৪টি সাইট অচল আছে। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, অপর্যাপ্ত ও মানহীন বিটিএস দিয়ে চলছে দেশের টেলিযোগাযোগ সেবা। এর ফলে বিদ্যুৎ গেলেই থাকে না নেটওয়ার্ক। এতে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে উঠেছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবায় গ্রাহকের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ালেও মানহীন সেবা গ্রাহক ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আর এজন্য দায়ী অপর্যাপ্ত টাওয়ার, মানহীন মাইক্রোওয়েভ, মানহীন ব্যাটারি, ওভারহেড ফাইবার ও জেনারেটর না থাকা।

সর্বশেষ খবর