প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, অপরাধী যত প্রভাবশালীই হোন না কেন; কাউকে সুরক্ষা দেওয়া হবে না। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক  (আইজি) বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির বিষয়টি দেশব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার বিব্রত কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক স্পষ্টভাবে বলেছেন, কেউ যদি আইন ভঙ্গ করেন, তাহলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে সরকার বিব্রত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। লোকটা যতই ইনফ্লুয়েন্সিয়াল (প্রভাবশালী) হোন না কেন, সরকার কোনো রকম প্রটেকশন কাউকে দেবে না।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘কলকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে জাতীয় কমিটির’ তৃতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ভারতে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য খুন হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাই এটা নিয়ে খুবই শকড (ব্যথিত) হয়েছি। ঘটনাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটার ওপর কমেন্ট করা ঠিক হবে না।

মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পেশাদার সংগঠন যেগুলো আছে, যেমন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার এসব সংগঠন তাদের অথরাইজড করার মতো কারা আছেন, তাদের একটা তালিকা দেবে। যেমন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, প্লাম্বিং, এমইপি, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল তাদের তালিকা দিয়ে দেবে। তালিকায় যাদের নাম আছে, ভবনের নকশায় তাদের সই আছে কি না; সেটা দেখবে কমিটি। অনেক সময় সই নকল হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম তাড়া থাকবে, তালিকাভুক্তদের সইয়ে প্ল্যানিং বা নকশা জমা দেওয়া হয়েছে কি না, সেটা দেখা। পেশাগত সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সই সঠিক কি না; সেটার সত্যতা যাচাই করা হবে। সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের একটা আইন হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)। এ আইনে একটি অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) করার কথা রয়েছে বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি। যত দ্রুত সম্ভব এটা যাতে পূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করে, সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, এরই মধ্যে তিন পর্যায়ে আমরা সারা দেশের কলকারখানা পরিদর্শন করেছি। প্রথম ৫ হাজারে ফল অনেক ভালো পেয়েছি। পরিদর্শনের পর কারেক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান করে তাদের জানানো হয়েছে যে, এই ত্রুটি আছে, এগুলো ঠিক করতে হবে। সেই অনুসারে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি, আমরা যেভাবে অনুরোধ করেছিলাম, অন্তত ৫০ শতাংশ সেটা বাস্তবায়ন করেছে। বাকিদের আরও সময় দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই কাজ করছেন। সবার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।

সালমান এফ রহমান বলেন, প্রথম পর্যায়ে আমরা যেভাবে দ্রুত পরিদর্শন করেছি, দ্বিতীয় পর্যায়েও সেটা চালু থাকবে। তৃতীয় পর্যায়ে সারা দেশে ৫ হাজার ভবন পরিদর্শনের কথা ছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সারা বাংলাদেশে পরিদর্শন না করে ১৬টি জেলা যেখানে শ্রমঘন এলাকা বেশি, সেগুলো আমরা পরিদর্শন করব। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একটা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের প্ল্যানিং, ফায়ার সার্ভিসও থাকবে। তিনি বলেন, গত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঢাকা শহরের দুটো বাণিজ্যিক মার্কেট আমরা চিহ্নিত করেছিলাম, একটা গুলশানের শপিং কমপ্লেক্স, আরেকটা হচ্ছে মৌচাক। আমাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে গুলশানেরটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর মৌচাকের বেলায় হাই কোর্ট থেকে একটি স্টে অর্ডার এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, ওটাকে না ভেঙে রেট্রোফিট (সবকিছু ঠিক রেখে সংস্কার) করার জন্য। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রাজউক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দেখবে যে এটা (মৌচাকের মার্কেট) রেট্রোফিট করা যায় কি না। যদি করা সম্ভব হয়, তাহলে করা হবে। সম্ভব না হলে আবার আদালতে গিয়ে স্টে অর্ডার ভ্যাকেট করার জন্য বলব।

ঢাকা শহরের অনেক ভবনের পার্কিংয়ের জায়গায় দোকানপাট ও অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আমরা বলেছি যে পার্কিংয়ের জায়গা যাতে পার্কিংয়ের কাজে ব্যবহার হয়।