বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্ষয়ক্ষতি কাটানোর চ্যালেঞ্জ উপকূলে

১৯ জেলায় পৌনে ২ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ব্যাপক ক্ষতি ফসলের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষয়ক্ষতি কাটানোর চ্যালেঞ্জ উপকূলে

পটুয়াখালীর দুমকীতে রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ঘর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের সাত জেলায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে মন্ত্রণালয়। তবে রিমাল পূর্ণ আঘাত হানার আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্টসহ অন্যান্য দুর্ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত মারা গেছে ৩৯ জন। এ ছাড়া উপকূলীয় ও আশপাশের ১৯ জেলায় প্রায় পৌনে ২ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত ৪০ হাজার ৩৩৮টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৮টি। গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় সুন্দরবনসহ উপকূলের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা সরকার ও ভুক্তভোগীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ,  শরীয়তপুর ও যশোর। এর মধ্যে মারা গেছেন খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম ও পিরোজপুরে। দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে খুলনা জেলায়। এ জেলায় ২০ হাজার ৭৬২টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাগেরহাটে বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি। ভোলা, বরগুনা ও পিরোজপুরে ২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বাকিগুলো বিভিন্ন জেলায়। ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি খুলনাতেই, ৫৬ হাজার ১৪২টি। এ ছাড়া বাগেরহাটে ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও এ চিত্র বিরাজ করে। দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এ ঝড়ে দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ। রবিবার রাতে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। দেশের উপকূলসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল এলাকাজুড়ে তান্ডব চালিয়ে সোমবার সিলেট দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের আসামে গিয়ে শেষ হয়। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় মঙ্গলবারও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। উল্লেখ্য, রিমালের আাঘাতের এক দিন পর সোমবার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-

বাগেরহাট : সময় যত গড়াচ্ছে সুন্দরবনসংলগ্ন শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতচিহ্ন ততই জেগে উঠছে। শুরু হয়েছে ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও সহায়সম্বল হারা মানুষের হাহাকার। অনেকের ঘরে খাবার নেই। অনেকের ঘরে পানি জমে থাকায় রান্নাবান্না করতে পারছেন না। খুলনা : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সার্বক্ষণিক পাশে আছে সরকার। এক সপ্তাহের মধ্যে উপকূলের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন। গতকাল কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ মাঠে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী উপকূলীয় মানুষের দুঃখদুর্দশায় তাদের পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। গোপালগঞ্জ : টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তাড়াইল গ্রামের দীনবন্ধু গাইনের সংসারে রয়েছেন স্ত্রী ও এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে অনার্স পড়ছেন আর মেয়ে এবার এসএসসি পাস করেছে। সংসারের আর্থিক অনটন কাটাতে এ বছর ঋণ করে ৩০ বিঘার ঘেরে মাছের চাষ করেন। কিন্তু রিমালের তান্ডবে ঘের ভেসে যাওয়ায় এখন সর্বস্বান্ত তিনি। ঋণ কীভাবে শোধ করবেন সে চিন্তায় দিশাহারা।

গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন কুমার নন্দী জানিয়েছেন, রিমালের প্রভাবে অতিরিক্ত জোয়ার ও বৃষ্টিপাতে গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় মাছের ১ হাজার ৫১১টি ঘের ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া ঘেরের মোট আয়তন ৬১০ হেক্টর। এখান থেকে ৬৬৬ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে ৫৯৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন কার্পজাতীয় মাছ, চিংড়ি ৬৮ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন, পোনা ২৯ লাখ ও চিংড়ি পিএল ৬ দশমিক ৩১ লাখ পিস। এতে জেলার সহস্রাধিক চাষির অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর