শিরোনাম
শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
দুর্গত এলাকায় প্রধানমন্ত্রী

সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই উন্নয়ন

পটুয়াখালী ও কলাপাড়া প্রতিনিধি

সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই উন্নয়ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান -পিআইডি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হচ্ছে, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং মানুষের পাশেও দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

গতকাল দুপুরে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কলাপাড়া উপজেলার সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ মাঠে ঘূর্ণিঝড় রিমাল-পরবর্তী দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে বক্তব্য শেষে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাল, ডাল, লবণ, চিনি, সয়াবিন তেল, মরিচের গুঁড়া, হলুদের গুঁড়া ও ধনিয়া গুঁড়াসহ খাদ্যসামগ্রী ২ হাজার মানুষের মাঝে বিতরণ করেন।

জনসভা শেষে আন্ধারমানিক নদীর ওপর শেখ কামাল সেতু পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কনফারেন্স রুমে বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকাল ৩টায় তিনি পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় আসেন।

সরকারের ওপর সবাইকে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগ কাটিয়ে সবাই যেন নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করতে পারে সেসব ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সব সময় পাশে থাকবে এবং যা যা প্রয়োজন করে দেওয়া হবে। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে যেসব রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাঁধ যেগুলো ভেঙে গেছে, নির্মাণের কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি, যাতে বর্ষার আগেই এ বাঁধগুলো নির্মাণ করে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারি সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, আমরা খোঁজ নিতে বলেছি। যেখানে যেখানে যাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, তারা যেন ঘরবাড়ি আবার মেরামত করতে পারেন, আবার নির্মাণ করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও আমি করে দেব। অন্তত এটুকু ভরসা আপনারা রাখবেন। শেখ হাসিনা বলেন, জলোচ্ছ্বাসের কারণে অনেক পুকুরের পানি নোনতা হয়ে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় মাছের ঘের ভেসে গেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে, ধান কাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও তরিতরকারি, ফসল যেগুলো নষ্ট হয়েছে, কৃষক যাতে আবার সেগুলো বপন করতে পারে তার জন্য বীজ, সার যা যা লাগে সব ব্যবস্থা ইনশাল্লাহ আমি করে দেব। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রকৃতির নিয়মেই আসে। সেখানে মানুষের জীবন-মান বাঁচানোটাই সব থেকে বড় কথা। জিনিস গেলে পাওয়া যায়, কিন্তু জীবন তো আর পাওয়া যায় না। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র আছে বলেই মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। দেশের উন্নতির বিষয়ে আজকে বলার কিছু নেই; আপনারা নিজেরাই জানেন। আমরা রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ করে দিয়ে আপনাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, এবার খুবই অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। আমরা সাইক্লোন শেল্টার করেছি, সেখানে মানুষ নিরাপদে আশ্রয় পেয়েছে, দুর্যোগ সহনীয় ঘর ভূমিহীন-গৃহহীনদের মধ্যে বিতরণ করেছি। যে কারণে অন্তত মানুষ আশ্রয়ের জায়গা পেয়েছে। পশু-পাখির আশ্রয়ের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। আমরা চাই, এই দুর্যোগ থেকে আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ যেন মুক্তি পায়। আমরা জানি, এ অঞ্চলটা সব সময় দুর্যোগপ্রবণ। তিনি বলেন, মানুষের জীবনে যা চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা তার ব্যবস্থা করার জন্য যা যা করা দরকার আওয়ামী লীগ সরকার করে যাচ্ছে। বর্তমানে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকার এসেছে বলেই সম্ভব হয়েছে। এর আগে তো অনেকেই ছিল। কেউ তো এদিকে দৃষ্টি দেয়নি! এ অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, কিন্তু সেটাকে মোকাবিলা করে মানুষের জানমাল রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, পটুয়াখালী অঞ্চল একসময় অবহেলিত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। আমরা পদ্মা সেতু করে দিয়েছি। এখন আপনারা ঢাকা থেকে ছয় ঘণ্টায় কলাপাড়া আসতে পারেন। শান্তির প্রতীক পায়রা, তাই আমি সমুদ্রবন্দরের নাম পায়রা সমুদ্রবন্দর দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দক্ষিণাঞ্চল সব সময় অবহেলিত ছিল। আমি আপনাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, শের-ই-বাংলা নেভাল বেইজ করে দিয়েছি। মানুষ নিত্যপণ্য যাতে সহজে কিনতে পারে সেজন্য আমি ফ্যামিলি কার্ড করে দিয়েছি। দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্র্মাণ করব। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য যা যা দরকার আওয়ামী লীগ সরকার সেটা করে যাচ্ছে। দেশের মানুষ যেন না খেতে পেয়ে কষ্ট না পায় এজন্য তাদের সার্বিক উন্নতিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জনসভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো. মহিববুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল হাফিজ মল্লিক, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর