শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিন আসামি রিমান্ডে

নেপাল যাবেন গোয়েন্দারা, আইনজীবী চান না শিলাস্তি, বের হলেন মুখ লুকিয়ে

সাখাওয়াত কাওসার

তিন আসামি রিমান্ডে

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ ঘটনার রহস্য উন্মোচনে ভারতের পর এবার নেপাল যাচ্ছে তদন্ত টিম। আজ সকালেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তিন সদস্যের টিম কাঠমান্ডু যাচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, মামলার অন্যতম আসামি ফাইজুল ওরফে সিয়ামের অবস্থান নেপালে বলে জানতে পেরেছেন তারা। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে। যদিও এরই মধ্যে ওয়াশিংটন এবং কাঠমান্ডু এনসিবির (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) কাছে সহায়তা চেয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে এনসিবি, ঢাকা। অন্যদিকে, এমপি আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেফতার তিন আসামিকে আদালতের নির্দেশে ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

সূত্র বলছে, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহিন, তার সহযোগী সিয়াম, ফয়সাল ও মোস্তাফিজ এখনো অধরা। তবে শাহিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং সিয়াম নেপালে পালিয়ে গেছেন বলে এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতে যাওয়ার আগেই সিয়ামের নেপালে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারে বাংলাদেশের তদন্তসংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নেপাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কাঠমা-ুতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা। গত ২৬ মে ভারতের কলকাতায় গিয়ে সঞ্জীভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাঙ্কিতে কিছু মাংসের টুকরা উদ্ধারের পর গত বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে আসে তিন সদস্যের তদন্ত দল। সফল এই অভিযানের পরিধিকে আরও বিস্তৃত করতে এবার নেপালে পাড়ি দিতে যাচ্ছেন তারা। আজকে সকালে জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্লাইটে কাঠমা-ু রওনা হবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এবারের প্রতিনিধি দলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমানের নাম থাকার পরও তিনি যাচ্ছেন না। নেপালে যাচ্ছেন ভারতে যাওয়া তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্যরাই।

জানা গেছে, গতকাল আট দিনের রিমান্ড শেষে তিন আসামি শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্যা সাঈদ (৫৬), তানভীর ভূঁইয়া (৩০) ও শিলাস্তি রহমানকে (২২) আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিদের পুনরায় আট দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আসামিদের প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিক। এদিন, রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু আসামিদের রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। আসামিদের এজলাসে নেওয়ার পর কয়েকজন আইনজীবী আসামিপক্ষে মামলা লড়তে তাদের ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে চান। এ সময় উপস্থিত পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা আইনজীবীদের বলেন, আদালতের সামনে আবেদন করে স্বাক্ষর নিতে। শুনানির একপর্যায়ে বিচারক আসামি শিলাস্তি রহমানকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি আইনজীবী নিয়োগ করতে চান? জবাবে শিলাস্তি আইনজীবী নিয়োগ দিতে চান না বলে বিচারককে জানান। অপর দুই আসামিকে জিজ্ঞেস করলে তারা পুলিশ সদস্যদের জানান, তাদের পক্ষে আইনজীবী নেই, তবে তারা মামলা লড়তে আইনজীবী চান। এরপর রিমান্ড শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে চলে যান আসামি শিলাস্তি রহমান। গতকাল রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, কলকাতায় হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়া ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধারকৃত ভিকটিমের মাংসসদৃশ বস্তুর ফরেনসিক পরীক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে। আসামি আমানুল্যা জানান, ভিকটিমকে হত্যা করা ও লাশ থেকে হাড়-মাংস আলাদা করার কাজে আসামি ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ সরাসরি জড়িত ছিল। এ ছাড়া হাড় ও শরীরের অন্যান্য অংশ দূরে ফেলে দেওয়ার কাজে সিয়ামসহ অজ্ঞাতনামা দু-একজন সরাসরি জড়িত ছিল। এর মধ্যে জিহাদকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। অন্য আসামি তানভীর ভূঁইয়া (৩০) ঘটনার সময় আমানুল্যার সঙ্গে কলকাতা ছিল এবং আসামিকে সহায়তা করে মর্মে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এ ছাড়া আসামি শিলাস্তি রহমান (২২) ভিকটিমকে হত্যার সময় কলকাতায় ওই ফ্লাটে ছিলেন এবং ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনার এক অংশ হিসেবে ভিকটিমকে রিসিভ করার দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে।  রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ভিকটিমের লাশের অনেক অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এবং ঘটনায় জড়িত পলাতক মূল পরিকল্পনাকারী আকতারুজ্জামান শাহিন, সিয়াম, ফয়সাল ও মোস্তাফিজসহ অজ্ঞাতনামা অন্য আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাই মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও অন্য আসামিদের তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে এই তিন আসামিকে আরও আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এমপি আনারের নিখোঁজের মোটিভ উদ্ধার না হওয়া এবং অনেকে বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে তার ইমেজ নষ্ট করার জন্য মিথ্যা তথ্য রটাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন আনারকন্যা ডরিন। তিনি জানান, তার বাবা এত জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন তা এখন বুঝতে পারছেন। তার জনপ্রিয়তার কারণেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে কোনোভাবেই মেতে নিতে পারছেন না।

আনারকন্যা ডরিন জানান, আমার চাচা আবেদ আলীর ভিসা থাকলেও আমার ভিসা হাতে না পাওয়ায় আমরা কলকাতায় যেতে পারছি না। আগামী রবিবার ভিসার জন্য আমি ভারতীয় হাইকমিশনে যাব। যদি ভিসা না পাই তাহলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করব। আমার এখন একটাই চাওয়া- দ্রুত পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে আমার বাবার লাশের খি তাংশ দেশে নিয়ে আসা হোক।

এদিকে এ ঘটনায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করছে তার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে ফাঁসি দাবি করছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগরে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম আনার। বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। গত ২২ মে খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন। ঘরের ভিতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি লাশ। এ ঘটনায় গত ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

সর্বশেষ খবর