শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুর্ভোগে পানিবন্দি মানুষ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

দুর্ভোগে পানিবন্দি মানুষ

সুরমা নদীর পানি ঢুকে প্লাবিত সোবহানীঘাট এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেটের কোথাও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আবার কোথাও হয়েছে অবনতি। সুরমা, সারি, লোভা ও ধলাই নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা। ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের আরও তিনটি উপজেলায় নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ লাখ। জেলার আট উপজেলার ৬ লাখের বেশি মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। যেসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে সেসব এলাকার লোকজন আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। কুশিয়ারা ছাড়া বাকি সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সুরমার তীর উপচে ও নদীর সঙ্গে যুক্ত ছড়া-খাল দিয়ে নগরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের তালতলা, উপশহর, যতরপুর, তোপখানা, মাছিমপুর, সোবহানীঘাট, শেখঘাট ও কাজিরবাজার এলাকায় পানি উঠেছে। অনেকের বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাটও। নগরের তালতলাস্থ সিলেট ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন জানান, বন্যার পানি ওঠায় ওই স্টেশনের মেশিনারি সামগ্রী আলমপুর স্টেশনে স্থানান্তর করা হয়েছে। নগরের বন্যাকবলিত এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে সিটি করপোরেশন। করপোরেশনের জনসংযোগ  কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, গতকাল ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে অনেকে পরিবার নিয়ে উঠতে শুরু করেন। এ ছাড়া একই ওয়ার্ডের মতিন মিয়ার কলোনির ৪০টি পরিবার পার্শ্ববর্তী একটি খালি বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।

উজানে ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেটের কুশিয়ারা ছাড়া বাকি সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সিলেট সদর উপজেলার কিছু অংশ। এ ছাড়া জকিগঞ্জ উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বৃদ্ধি ও কানাইঘাট পয়েন্টে হ্রাস পেয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে গেল ২৪ ঘণ্টায় সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার কমেছে ও সিলেট পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলসীদ ও শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুরে এখনো বিপৎসীমার নিচে থাকলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া লোভা, সারি, ডাউকি, ধলাই ও সারিগোয়াইন নদীর পানি গেল ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমেছে। সুরমা ও লোভা নদীর পানি কমায় কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কানাইঘাট উপজেলা সদরের বাজার থেকে পানি প্রায় নেমে গেছে। উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ও দিঘীরপাড় ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে উপজেলার নিম্নাঞ্চল রাজাগঞ্জ, ঝিঙ্গাবাড়ি, দক্ষিণ বাণিগ্রাম ইউনিয়নের অনেক এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। 

গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, সালুটিকর-সারিঘাট, হাতিরপাড়া-ফতেহপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে বৃহৎ এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সারি নদীর পানি কমায় জৈন্তাপুর উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলারও কোথাও উন্নতি ও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উজানের পানি নামতে শুরু করায় নিম্নাঞ্চলে নতুন করে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন।

জকিগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সিলেট-শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি ওঠায় চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। গত বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত সিলেটের পাঁচটি উপজেলা বন্যাকবলিত থাকলেও গতকাল নতুন করে আরও তিনটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত উপজেলাগুলো হচ্ছে- বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট সদরের একাংশ। জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন। গতকাল তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ জনে। বন্যার্তদের জন্য জেলার সব কটি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জেলার পাঁচটি উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮০২ জন। তবে গেল ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় অনেকে বাড়ি ফিরেছেন। ফলে গতকাল বন্যাকবলিত আট উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৩৯ জনে।

সর্বশেষ খবর