সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

এই প্রথম লোহার খাঁচায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই প্রথম লোহার খাঁচায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো। এটা একটা দেখার মতো দৃশ্য। এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা যে, লোহার খাঁচার ভিতরে দাঁড়িয়ে আছি আদালতের কাঠগড়ায়। এটা অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ অর্থ আত্মসাৎ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

এ মামলায় গতকাল আদালতে প্রবেশ করে এজলাসের বেঞ্চে বসেন ড. ইউনূস। এরপর আদালত থেকে ড. ইউনূস ছাড়া বাকি আসামিদের ডগে (কাঠগড়া) যেতে বলা হয়। ড. ইউনূস সবার সঙ্গে লোহা দিয়ে ঘেরা কাঠগড়ায় স্বেচ্ছায় গিয়ে দাঁড়ান। বিচারক সবাইকে কাঠগড়া থেকে বের হতে বললে ড. ইউনূস কাঠগড়া থেকে বের হন। সবাইকে বেঞ্চে বসিয়ে এরপর ড. ইউনূস নিজে বেঞ্চে বসেন। কাঠগড়ায় তিন মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন ড. ইউনূস। ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যে, এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল বিজয়ী মামলা করেছে। আমরা নোবেল পুরস্কারের কথা সবাই জানি। দুটো নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। একটা আমার নামে, আরেকটা গ্রামীণ ব্যাংকের নামে। এটা যৌথভাবে দেওয়া হয়েছে তাও না, দুটোই ইনডিপেন্ডেন্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নজির নেই যে, এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল বিজয়ী মামলা করেছে, দুদকে হাজির হয়েছে। এটা আমাদের কপালে হয়েছে, এটা অভিশাপের একটা অংশ। এই অভিশাপ আমরা বহন করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ থাকতে পারে। এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। ঘটনার মধ্যে কোনো সত্যতা তো নেই। যে জিনিস দিয়ে দিয়েছিলাম, সেটার জন্যই আমাকে অভিযুক্ত করা হলো যে, অনেক টাকা মেরে দিয়েছি ইত্যাদি।

ড. ইউনূস আরও বলেন, এ পর্যন্ত যত অভিযোগ এসেছে আমার বিরুদ্ধে এবং আমার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে, এটা আমার মনে কঠিনভাবে দাগ কেটেছে, কষ্ট লেগেছে। কারণ, আমার পরিবারকে আক্রমণ করেছে। কেন আমাদের এ অভিশাপ বহন করতে হচ্ছে, সেটা আমাদের আইনজীবী বলবেন। তিনি আরও বলেন, বহুদিন গেছে আমাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কোনো নিস্তার নেই, একটার পর একটা চলছে। অভিশপ্ত জীবনের একটা বড় পর্যায়ে পৌঁছে গেছি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কেন এই অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটা দেব-দেবীর ইচ্ছা। এখানে আমার কিছু করার নেই। দেব-দেবীরা ঠিক করেন যে একে অভিশাপ দিতে হবে, অভিশাপ দিয়েছে আমাকে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে হবে। মামলার অভিযোগ বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এখানে ড. ইউনূসের কোনো হাত নেই। গ্রামীণ টেলিকমের কোনো হাত নেই। আজকে বেনজীরের জন্য এয়ারপোর্ট খুলে দেওয়া হলো, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়া হলো। পিকে হালদারকে বের করে দেওয়া হলো টাকাসহ। অথচ এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, আজিজ সাহেবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, ড. ইউনূস সাহেবকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য, তাকে ব্যক্তিগতভাবে টার্গেট করে এই নোবেল বিজয়ীকে দেশের ভিতরে অপমানিত করা হচ্ছে। এদিন গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি শেষে হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১২ জুন দিন ধার্য করেছেন।

সর্বশেষ খবর