মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মোদির হ্যাটট্রিক না অন্য কেউ

♦ ভারতে ক্ষমতা কাদের ♦ ফল ঘোষণা আজ ♦ টানটান উত্তেজনা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মোদির হ্যাটট্রিক না অন্য কেউ

আজ সকাল ৮টায় শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা। গোটা ভারতে জল্পনা-নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন নাকি অন্য কেউ? বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) কি আবারও কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসছে নাকি শেষলগ্নে বাজিমাত করবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের জোট ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)। জানা গেছে, দিল্লি থেকে গোটা গণনা প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ও বাকি দুই নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং সুখবির সিং সান্ধু। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গণনার ট্রেন্ড এবং ফলাফল নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেই তুলে দেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপের মাধ্যমে।

গত ১ জুন সাত দফার ভোট শেষ হওয়ার পরপরই সন্ধ্যায় সর্বভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর পাশাপাশি একাধিক বেসরকারি সংস্থার করা ‘এক্সিট পোল’ (বুথফেরত জরিপ) সামনে আসে। তাতে দেখা গেছে, ফের একবার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে চলেছে এনডিএ। এমনকি কেউ কেউ বলছেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনের থেকেও ভালো ফল করতে চলেছে ৭৩ বছর বয়সি মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। সে ক্ষেত্রে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করবেন নরেন্দ্র মোদি। দক্ষিণ ভারতের পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গেও ভালো ফল করতে চলেছে বিজেপি। বিরোধী দলগুলো এ এক্সিট পোলের অভিমতকে কোনো গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল এটিকে ‘ভুয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘তিনি এ এক্সিট পোল বিশ্বাসই করেন না।’ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক (জনসংযোগ) জয়রাম রমেশ এক্সিট পোলের এ ভবিষ্যদ্বাণীকে নস্যাৎ করে দিয়ে বলেন, ‘ইন্ডিয়া কমপক্ষে ২৯৫টি আসনে জয় পাবে।’ রবিবার কংগ্রেস সংসদ সদস্য সোনিয়া গান্ধীর মন্তব্য, ‘এক্সিট পোল যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ভোট গণনার দিন ঠিক তার বিপরীত ফলাফল হবে।’ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোনিয়া বলেন, ‘আসল ফলাফলের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দেখতে থাকুন কী হয়।’ সোনিয়াপুত্র রাহুল গান্ধীও এক্সিট পোলকে ‘মোদি মিডিয়া পোল’ বলে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া জোট ২৯৫টি আসনে জিতছে।’ আবার এক কদম এগিয়ে এক্সিট পোলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন আপের সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং। তিনি বলেন, ‘এক্সিট পোলের ভবিষ্যদ্বাণী একাধিকবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’ তবে এক্সিট পোল সামনে রেখেই উৎসবে মেতে উঠেছেন বিজেপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, ‘এক্সিট পোলের ওপর অবশ্যই ভরসা করা যায়।’ তাঁর দাবি, ‘মোদি শাসনের ১০ বছরে যত উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা স্বাধীনতার পরবর্তী ৬০ বছরেও হয়নি। সাধারণ মানুষও মোদিজির এ কর্মকাণ্ডের ওপর ভরসা রেখেছে। বিজেপি কেবল মানুষকে ভরসা দেয় না, তাদের স্বার্থ, সুবিধা-অসুবিধা নিয়েও ভাবে।’ বুথফেরত জরিপের ফলাফল সামনে রেখে রবিবার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর দল বিজেপি আবার ক্ষমতায় এলে সামনের ১০০ দিনের সরকারের কী করণীয়, পাশাপাশি উত্তর ভারতসহ একাধিক রাজ্যে যে দাবদাহ চলছে সেই পরিস্থিতি কীভাবে মেটানো হবে-তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। এদিকে মোদি সরকার যাতে কেন্দ্রে ৪০০ আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে, সেই কামনা করে দেশজুড়ে একাধিক জায়গায় শান্তিযজ্ঞ করেন বিজেপি কর্মীরা। আবার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভালো ফলের আশায় ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারের সামনে যজ্ঞ করেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। লোকসভার পাশাপাশি অন্ধ্র ও ওড়িশার বিধানসভা নির্বাচনেরও ফলাফল ঘোষণা হবে আজ। একই সঙ্গে গোটা দেশে একাধিক রাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেরও ফলাফল ঘোষণা হবে।

লোকসভার মোট আসন ৫৪৩ : শেষবার ২০১৯ সালের নির্বাচনে এনডিএ ৩৫৩ আসনে জয় পেয়েছিল। এর মধ্যে বিজেপি একাই ৩০৩ আসনে জয় পায়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ)’ ৯১ আসনে জয় পায়। এর মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে ৫২ আসন লাভ করে। তবে এক্সিট পোলের ভবিষ্যদ্বাণী যদি মিলে যায় তবে বলতেই হয়, এবারের নির্বাচনও অনেকটাই একপেশে হবে। সে ক্ষেত্রে উত্তর ভারতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার পাশাপাশি দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতেও বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলোর পায়ের মাটি শক্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফের একবার ক্ষমতায় আসার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তার পেছনে রয়েছে দুর্বল বিরোধী দল/জোট। বিরোধীদের তরফে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগত বিকল্প উপস্থাপনের অক্ষমতাই ক্ষমতাসীন দল আর জোটের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা সুগম করেছে। ভোটারদের মতামত গঠনে এবারের নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফরমগুলো রাজনৈতিক প্রচারের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এগুলো ভোট সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা এবং ভোটারদের আচরণকে প্রভাবিত করছে। আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য দলগুলোর থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল বিজেপির আইটি সেল।

সর্বশেষ খবর