মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কালো টাকার পাহাড়

♦ ৫০ বছরে ১ কোটি ৩২ লাখ কোটি টাকা কালো ♦ পাচার ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি ♦ ১১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট অর্থনীতি সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

কালো টাকার পাহাড়

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এ ছাড়াও পাহাড়সম কালো টাকা থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা এবং পাচার হওয়া অর্থ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের সুপারিশ করেছে সমিতি। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিকল্প বাজেট পেশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এ সময় সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং সদ্যবিদায়ী সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে টেকসই মধ্য মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে এই বিকল্প বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে। এই বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে সমাজে বৈষম্য দূর, দারিদ্র্য নিরসন, সামাজিক সুরক্ষা, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে। অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের ৯২.১৩ শতাংশ। আর বাজেটের বাকি ৭.৮৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার ঘাটতি অর্থায়ন জোগান দেবে সম্মিলিতভাবে বন্ড বাজার (মোট ৯৫ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা; অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নের ৫৬.১ শতাংশ), সঞ্চয়পত্র বিক্রয় থেকে ঋণ গ্রহণ (মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি অর্থায়নের ১৪.৬ শতাংশ), এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব (মোট ৫০ হাজার কোটি টাকা, যেখান থেকে আসবে ঘাটতি অর্থায়নের ২৯.৩ শতাংশ)। সমিতির প্রস্তাবে ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণের কোনো ভূমিকা থাকবে না, যা চলতি অর্থবছরের সরকারি বাজেটে ঘাটতি পূরণে ৩৯.৫ শতাংশ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট অর্থায়নে কোনো দেশি ও বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না। অর্থনীতি সমিতি বলছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত ৫০ বছরে কালো টাকা ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে মাত্র শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি। সেখান থেকেই আহরণ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ওই সময়ে বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করা হয়েছে। যার পরিমাণ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর রাজস্ব খাত থেকে আসবে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেটের প্রস্তাবনায় বলেছে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে সরকারকে অনেক উৎসে হাত দিতে হবে, যেসব উৎসে অতীতে কখনো হাত দেওয়া হয়নি অথবা প্রয়োজন মতো হাত দেওয়া হয়নি, যার অন্যতম হলো সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর, অর্থ পাচার ও কালো টাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি এবং বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর আরোপ। অর্থনীতি সমিতি মনে করে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মধ্যে এখন পরোক্ষ করের ওপর তুলনামূলক বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে, যা মানুষে মানুষে বৈষম্য বাড়ায়। তাই পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি জোর দিতে হবে এবং দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষকে সামনের কয়েক বছর আয়কর বেষ্টনীর বাইরে রাখতে হবে। এর আগে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেছিল বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর