বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল কংগ্রেস

ফলাফল বিশ্লেষণ

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল কংগ্রেস

রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বিজয় চিহ্ন দেখান ছবি : কংগ্রেস ফেসবুক

টানা তৃতীয়বারের জন্য ভারতের কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ক্ষমতায় ফিরলেও শক্ত লড়াই করেছে বিরোধী দলের জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া)। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট যখন ধর্মীয় ইস্যুর মতো বিষয় সামনে নিয়ে ভোট চেয়েছে, উল্টোদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষাসহ বিভিন্ন সমস্যা জনগণের সামনে তুলে ধরেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কৌশলই ভোটের মাঠে এগিয়ে দিয়েছে বিরোধী জোটকে। ‘ইসবার ৪০০ পার’ (এবার ৪০০ পার), এই স্লোগান দিয়েই ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে প্রচারণা শুরু করেছিল বিজেপি। গত ১ জুন দেশটিতে শেষ দফার নির্বাচনের পর যে বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশিত হয়, তাতে বলা হয়েছিল এনডিএ সাড়ে ৩০০ আসন পাবে। কিন্তু সমীক্ষার ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত করে উল্টো বিরোধীরাই শক্তিশালী হয়েছে। মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২টি আসন। সেখানে ৩০০ আসন অতিক্রম করার কোনো সম্ভাবনা নেই। সব মিলিয়ে এনডিএ ২৯৩ আসনের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। অন্যদিকে বিরোধীদের দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র আসন সংখ্যা রয়েছে ২৩২-এর কাছাকাছি। এর মধ্যে প্রায় ১০০ আসন ছুঁইছুঁই কংগ্রেসের। গত দুটি লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার যথেষ্ট ভালো ফল করতে চলেছে শতাব্দী প্রাচীন এই দলটি। শেষবার ২০১৯ সালে ৫২ আসনে জয় পায় তারা। তার আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের দখলে ছিল মাত্র ৪৪টি আসন।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের গণনা শুরুর পর শাসক জোট এনডিএকে জোর টক্কর দিল ইন্ডিয়া জোট। উত্তরপ্রদেশের যে বারাণসি কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জিতেছেন সেখানেও গতবারের চেয়ে জয়ের ব্যবধান অনেক কম। কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রাইকে মাত্র দেড় লাখ ভোটে হারিয়েছেন মোদি।

ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসভার আসন উত্তরপ্রদেশে (৮০টি)। রাজনীতিতে কথিত আছে উত্তর প্রদেশ যার হাতে থাকবে, ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাও তার হাতে। সে ক্ষেত্রে এই রাজ্যেও দাগ কাটতে পারেনি গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা। তুলনামূলকভাবে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক দল সমাজবাদী পার্টি ভালো ফল করেছে। ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩৪ আসনে এগিয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়া রয়েছে ৪২ আসনে। বিরোধীদের ঝড়ে বিজেপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা-মন্ত্রীকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে। আমেথি কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী কে এল শর্মার কাছে ১.৬ লাখ ভোটে হেরে গেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

শেষবার ২০১৯ সালে নির্বাচনে এই উত্তর প্রদেশ থেকে ৬২ আসনে জয় পেয়েছিল এনডিএ। বহুজন সমাজ পার্টির ১০ এবং সমাজবাদী পার্টি ৫ আসনে জয় পায়।

মহারাষ্ট্রেও একই অবস্থা। এনসিপি (শারদ পাওয়ার গোষ্ঠী) ও শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) সঙ্গ ত্যাগ করে শিবসেনার (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছিল। কিন্তু সেখানেও উদ্ধব ঠাকরে ও শারদ পাওয়ারের দল প্রতিপক্ষের থেকে ভালো ফল করেছে।

রাজস্থান, হরিয়ানা, ঝাড়খ , বিহারের মতো ভারতের হিন্দি বলের রাজ্যগুলোতে খুব ভালো ফল করেছে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থীরা।

জানতাম মানুষ জবাব দেবে -রাহুল : ইন্ডিয়া জোটের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দেশের ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এদিন দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল জানিয়েছেন, ‘কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোট এবারের ভোটে শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েনি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি ইডি, সিবিআই এর অপব্যবহারের বিরুদ্ধেও লড়েছে।’

হাতে সংবিধান নিয়ে রাহুল বললেন, ‘এই লড়াই ছিল সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। দেশবাসীকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনারা সংবিধানকে রক্ষার প্রথম ও সব থেকে বড় পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছেন। যখন দল ভেঙেছে, আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে, মুখ্যমন্ত্রীদের জেলে ঢুকিয়েছে, তখনই জানতাম যে মানুষ এর জবাব দেবে।’

ভোটের ফল প্রকাশের পর মঙ্গলবার বিকালে কংগ্রেসের সদর দফতরের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধী, দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশসহ অন্যরা।

রাহুল জানিয়ে দেন, এখন একটি বিষয়ে স্পষ্ট যে, এই রায় নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে গেছে। এটা তার রাজনৈতিক হার, নৈতিক হার। যে ব্যক্তি সব জায়গায় নিজের নামে ভোট চাইতেন, এটা তার কাছে খুব বড় হার।

তবে এখনো পর্যন্ত লোকসভা ভোটের গণনার ফলাফলের যে প্রবণতা তাতে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। যদিও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে আছে। তবে এই অবস্থায় শাসক জোটকে স্বস্তিতে থাকতে দিতে নারাজ বিরোধী জোট ইন্ডিয়া।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী সেটাই জানিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, এই নির্বাচনের সব থেকে বড় বিষয় হলো দেশবাসী একজোট হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা মোদি জুটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাহুল এও জানালেন, কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য তাদের পুরনো শরিক দল জনতা দল ইউনাইটেড, তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না- এই বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার ইন্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছে।

অন্যদিকে নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে নিজে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন নরেন্দ্র মোদি। তার দলের ওপর ভরসা রাখার জন্য তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তৃতীয়বারের জন্য এনডিএ জোটকে ক্ষমতায় আনায় ইতিহাস তৈরি হলো বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কঠোর পরিশ্রমের জন্য বিজেপির কর্মী-সমর্থকদেরও অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর