বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

৮ লাখ কোটির বাজেট কাল

মূল্যস্ফীতি ডলার সংকটের মতো চ্যালেঞ্জ সামনে, অধিবেশন বসছে আজ

মানিক মুনতাসির

৮ লাখ কোটির বাজেট কাল

বৈশ্বিক সংকট ও দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক টানাপোড়েন থেকে বেরোতে আইএমএফের পরামর্শে জাতীয় বাজেটের পরিধি কমিয়ে এনেছে সরকার। তবে বাজেট বক্তৃতার পরিধি কমেনি। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার পরিধি ছিল ২৪৮ পৃষ্ঠা। এ বছর অর্থমন্ত্রীর জন্য প্রস্তত করা বাজেট বক্তৃতার পরিধি ৩২৯ পৃষ্ঠা। অন্য বছর বাজেট ১২-১৫ শতাংশ বাড়ানো হলেও এবার বাড়ছে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ। ফলে বছরওয়ারি তুলনা করলে বরাদ্দও কমবে অনেক খাতে। অর্থবিভাগ ও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতির পারদ গলানোই এবারের বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু তাই নয়, উচ্চতর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবারের বাজেটে। অর্থবিভাগের তথ্যমতে, আসছে বাজেটের মোট আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের মূল আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন এই অর্থমন্ত্রী আগামীকাল জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটটি প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করবেন। আজ থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। এই বাজেট অধিবেশন হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশন। এটি হবে বর্তমান সরকারের টানা চতুর্থবার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বাজেট।  এদিকে অর্থমন্ত্রীর জন্য যে বাজেট বক্তৃতা প্রস্তুত করা হয়েছে তার কিছু অংশ বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। ওই অংশের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, বৈশ্বিক সংকট, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, ডলারের বিপরীতে টানার মান অবনমন, রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি, রিজার্ভের পতন ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ভারসাম্যহীতায় সামগ্রিক অর্থনৈতিক অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে শঙ্কাই দেখছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার একাংশে (আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে) তিনি তুলে ধরবেন মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট দেশের অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে। মুদ্রার অবমূল্যায়নে বাড়ছে বৈদেশিক ঋণের ব্যয়, যা দেশের অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কেন প্রবর্তন করা হয়েছে। এর প্রয়োজনীয়তা কী? এ নিয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বাজেট বক্তৃতায়। অর্থমন্ত্রীর এই বাজেট বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছেন। বাজেট বক্তৃতার প্রথমাংশে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের ‘ফিরিস্তি’ তুলে ধরা হবে। থাকবে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কথাও। এগুলোর জন্য দায়ী করা হয়েছে কভিড-পরবর্তী ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধকে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রিজার্ভ বাড়বে এবং কমবে মূল্যস্ফীতি। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাতে ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ঘাটতি পূরণে বিদেশি ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে বলেও ধরা হয়েছে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে মোট আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। এনবিআর বহির্ভূত উৎস থেকে রাজস্ব আসবে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আসছে বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে অবশ্য তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী বছর মূল্যস্ফীতির চাপকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে নতুন বাজটে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি রয়েছে। নতুন অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপির আকার করা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।  দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করলেও আন্তর্জাতিক নানা চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। তৈরি পোশাক খাতের ওপর আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবিধ নিষেধ এলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশ। এমনিতেই উচ্চ বৈদেশিক ঋণ, ডলার সংকট, ব্যালেন্স অব পেমেন্টে নেতিবাচকতা, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাজার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতিহীনতায় দেশের অর্থনীতি থমকে আছে। ফলে নতুন মেয়াদের প্রথম বাজেটটি চলমান বৈরী সময়ের ধাক্কা সামলানোর বাজেট বলে মনে করেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর