মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রাথমিকভাবে বাতিল হওয়া এক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সভা করার অভিযোগ এসেছে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল)-এর বিরুদ্ধে। ২৭ মে প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নকারী কমিটি ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের নেতৃত্বে থাকা কনসোর্টিয়ামের আর্থিক প্রস্তাব বাতিল ঘোষণা করে। বাতিলকৃত আর্থিক প্রস্তাবটি পুনর্বহালের জন্য সিপিজিসিবিএলের একটি মহল জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানান, বাতিলকৃত আর্থিক প্রস্তাব পুনর্বহালের মাধ্যমে ওই কনসোর্টিয়ামকে কয়লা আমদানির সুযোগ দিতে সম্প্রতি ‘বিশেষ সমঝোতা’ সভা হয়েছে।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হচ্ছে চলতি মাসের শেষ দিকে। জাপানের আর্থিক সহায়তায় নির্মিত দুই ইউনিটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর দ্বিতীয় ইউনিটও পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেও প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে একই মাসের ২৬ তারিখ। অভিযোগ রয়েছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি চার প্রতিষ্ঠান যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রস্তাব দাখিল করলেও ‘আর্থিক সক্ষমতা নেই’ অজুহাতে তিন প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২৭ মে কারিগরি কমিটির সভায় চারটি কনসোর্টিয়ামের সবকটির আর্থিক প্রস্তাব বাতিল হয়। প্রকল্প কর্মকর্তাদের ‘স্বেচ্ছাচারিতায়’ বাতিল হওয়া তিন কনসোর্টিয়ামের একটি ২৯ মে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার উত্তর পায়নি।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কমপক্ষে ১২ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানির অভিজ্ঞতার শর্ত উল্লেখ ছিল, যা কয়লা আমদানি-সংশ্লিষ্ট দরপত্রের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক শর্ত। কিন্তু একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে ওই শর্তটি শিথিল করে ১২ লাখ মেট্রিক টন লোহা, সার, কেমিক্যাল, সিমেন্ট অথবা খাদ্যশস্য আমদানির অভিজ্ঞতা যোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা একটি অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে। দরপত্রে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি কনসোর্টিয়ামের আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, কয়লা সরবরাহে আমাদের ব্যাপক অভিজ্ঞতা ও সাফল্য বিবেচনা না করেই এবং বিস্তারিত কোনো কিছু অবগত না করেই এবং কারিগরি বিষয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন না করে এবং কোনো প্রকার ব্যাখ্যার সুযোগ না দিয়েই আমাদের ‘কারিগরিভাবে অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের দরপত্রকে কারিগরিভাবে যোগ্য ঘোষণা করে প্রতিযোগিতামূলক এবং রাষ্ট্রের জন্য লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও একক প্রতিষ্ঠানকে ‘পক্ষপাতিত্বমূলক’ভাবে কার্যাদেশ প্রদানের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়।

দরপত্র প্রক্রিয়ার কারিগরি কমিটির সদস্য ও সিপিজিসিবিএলের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. শহিদুল্লাহকে একাধিকবার ফোনে ও খুদে বার্তায় মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর কোনো সাড়া মেলেনি।