শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
কী বলছে রাজনৈতিক দল

লুটপাট ও শোষণের হাতিয়ার : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

লুটপাট ও শোষণের হাতিয়ার : বিএনপি

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘অর্থ লুটের নতুন পরিকল্পনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশ এখন লুটেরাদের কবলে। এই বাজেটও হয়েছে লুটেরাদের জন্য। বাজেটে দেশের অর্থ নতুনভাবে লুটপাটের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত তথাকথিত বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে অনেক বেশি। গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এই মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের যেসব খাত দেখানো হচ্ছে- তাতে সাধারণ মানুষের ওপর গিয়েই এই বোঝাটা পড়বে এবং ব্যয় মেটানোর জন্য যা করবে- সেটাও সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে পড়বে। অর্থাৎ এই বাজেট হলো বিদেশি ঋণ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণ নির্ভর। সবটাই গিয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। বাজেটের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো- এখানে কর্মসংস্থান তৈরির মতো কোনো নির্দেশনা নেই। পুরো বাজেটটি মেগা প্রকল্পের এবং মেগা চুরি ও দুর্নীতির জন্য করা হয়েছে। সুতরাং এটি শুধু তথাকথিত গণবিরোধীই নয়, এটি বাংলাদেশ বিরোধী বাজেট। তিনি বলেন, মানুষ এই বোঝা আর টানতে পারছে না। একদিকে চরম মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে খাদ্য-দ্রব্যের যে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে- সেটা তাদের জন্য সহনীয় নয়। কয়েকদিন আগেই পেট্রল-ডিজেল, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের পর আবারও এসবের দাম বাড়বে। আইএমএফ-এর সঙ্গে চুক্তির ফলে প্রতি বছর চারবার করে দাম বাড়বে। মির্জা ফখরুল সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোন রাস্তায় আপনারা সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান করছেন? মানুষ তো আর পারছে না। বহু মানুষ কিন্তু শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। কারণ তারা ঢাকা শহরে আর টিকতে পারছে না। আবার গ্রামে গিয়েও বিপদে পড়ছে- কারণ সেখানে কর্মসংস্থান নেই।

মির্জা ফখরুল বৈধ আয় এবং কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে করের বিষয়ে বলেন, যারা ন্যায়ভাবে আয় করে তাদের ওপরই তো পুরো চাপটা পড়ে। অন্যায়কারীদের জন্য কিছু হয় না। দেখুন না, কী করে সরকারি কর্মকর্তা হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ করে? এত সম্পদ তৈরি করে? এখানে তো গেল দুটি (বেনজীর-আজিজ) ঘটনা। এমন অনেক ঘটনা আছে। চারদিকে তাকালেই দেখবেন। এই যে, মালয়েশিয়ায় কর্মীরা যেতে পারল না। এটা সুশাসনের অভাব এবং সরকারের চরম ব্যর্থতা। এখানে সরকারের ৪-৫ জন সংসদ সদস্য জড়িত। কোথায় যাবে মানুষ? তাদের দাঁড়াবার জায়গা নেই। তিনি বলেন, এই সংসদ তাদের। তারাই সরকারি দল, তারাই বেসরকারি দল। ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে এটি হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম- একজন সংসদ সদস্য বেনজীরের ওপর আলোচনা শুরু করলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মানে সেখানে জনস্বার্থে কোনো কিছু বলা যাবে না। শুধুই স্তুতি আর স্তুতি করতে হবে।

এই বাজেট দরিদ্র  মানুষকে শোষণের সাজানো হাতিয়ার-মঈন খান  : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে এ দেশের ‘দরিদ্র মানুষকে শোষণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাজানো একটি হাতিয়ার’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, পুরো বাজেট প্রক্রিয়াটিই জনগণের সঙ্গে একটি করুণ ও হৃদয়বিদারক প্রতারণা মাত্র। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। মঈন খান বলেন, একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগ আজ অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে সরকারের ক্ষমতা দখল করে আছে। কাজেই এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারণে জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন এই সরকারের কোনো নৈতিক অধিকার নেই এবং এটাই হচ্ছে আজকের দিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য! এই সাবেক মন্ত্রী আরও বলেন, এককথায় বলতে গেলে এ দেশের দরিদ্র্য মানুষকে শোষণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাজানো একটি হাতিয়ার এই বাজেট! এই কল্পনার ফানুস- একদিকে দেশের বর্তমান ধ্বংসপ্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে এবং অন্যদিকে দেশের গণমানুষের চলমান ত্রাহি ত্রাহি অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে এক নিষ্ঠুর খেলা মাত্র। ফলশ্রুতিতে দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তায় এই বাজেট দেওয়া না দেওয়ার কোনোরকম সম্পর্ক তো নেই-ই, বরঞ্চ এই অলিগার্কিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকারের নির্বাচন নাটকের পরে আগামী অর্থবছরের জন্য এই বাজেট সরকার কর্তৃক জনগণকে নিয়ে আরও একটি করুণ ও হৃদয়বিদারক প্রতারণার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

সর্বশেষ খবর