শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ : প্রধানমন্ত্রী

ছয় দফা দিবস উপলক্ষে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গতকাল আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশেষ করে খাদ্যমূল্য। বৃষ্টির কারণে আলুর বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এরকম অনেক কিছুই আছে। আমরা এখনো উৎপাদনমুখী হলে খাদ্যে অভাব হবে না। বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে। ছয় দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভার আগে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘ইতিহাসের গতিধারায় বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক সংবাদ চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার বাজেট দিয়েছি। বিএনপির আমলে সর্বশেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার। আমরা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছি। এ বাজেটে মানুষের মৌলিক অধিকার- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, দেশীয় শিল্প, সামাজিক নিরাপত্তা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা মানুষের জীবনকে উন্নত করবে, নিশ্চয়তা দেবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কভিড-১৯ এর ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে। আমরাও সেই মন্দায় পড়ে গেলাম। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এরপর স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন। ফলে প্রত্যেক জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হবে আগে। রিজার্ভ কত আছে, না আছে- তার চেয়ে বেশি দরকার মানুষের চাহিদা পূরণ করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পানির মতো টাকা খরচ করেছি। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যা কোনো উন্নত দেশ করেনি- বিনা পয়সায় কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন দিয়েছি। বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি। সেটা করেছি কেন? মানুষকে বাঁচাতে। চিকিৎসা বিনা পয়সায়, যে ডাক্তার চিকিৎসা করেছে তাদের প্রতিদিন আলাদা ভাতা দিতে হতো। এভাবে পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। তারপর যখন দাম বেড়েছে, তখন ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলার করেও কিনে নিয়ে এসেছি। একইভাবে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। উন্নত দেশগুলোও এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। কালো টাকা সাদা করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা নিয়ে শুনি- কালো টাকা সাদা করলে আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা নয়। জিনিসের দাম বেড়েছে। এখন এক কাঠা জমি যার আছে সেই কোটিপতি। সরকারি হিসাবে কেউ জমি বিক্রি করে না। বেশি দামে বিক্রি করে। এতে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এ টাকা তারা নিজেদের কাছেই রাখে। এবার আমরা চেয়েছি এমন ব্যবস্থা করতে যাতে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তারা যেন সেটা আসল পথে নিয়ে আসে। শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে। আমরা দেশে পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আমরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করব। কারও কাছে হাত পেতে চলব না। কোনো জমি অনাবাদি রাখা যাবে না।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। মানুষের চাহিদা পূরণের ভাবনা থেকেই এ বাজেট দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে হিসাব কষে, আগে এত পার্সেন্ট বেড়েছে এবার কম পার্সেন্ট বাড়ল কেন? এখন সীমিতভাবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের চাহিদা যেন পূরণ করতে পারি- সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বাজেট করেছি। তিনি বলেন, পারিবারিক কার্ড দিচ্ছি। কারণ, এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। আমাদের উৎপাদন বেড়েছে। চাল উৎপাদনই চার গুণ বাড়িয়েছি। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে। মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। কম পক্ষে দুই বেলা খাবার তো পাচ্ছে মানুষ। তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আমরা পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। সামাজিক নিরাপত্তা তো বিনা পয়সায় দিচ্ছি। মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যের ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। খাদ্যপণ্য, চিকিৎসাক্ষেত্রে, ক্যান্সার, ডায়ালাইসিসের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে একদিকে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা, দেশীয় শিল্পকে প্রাধান্য দেওয়া, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, কাঁচামালসহ এসব বিষয়ে সুরক্ষা দিয়ে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাজেট দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, নিত্যপণ্য যেমন ল্যাপটপের দাম কমবে, ক্ষুদ্র-মাঝারি যন্ত্রাংশের দাম কমবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন- আমি সরকারে আসার পর, এটা ২১তম বাজেট দিলাম। সবসময় আমরা ৫ শতাংশ বাজেট ঘাটতি রাখি। এবারও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রাখা হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে এমনকি উন্নত দেশেও আছে। আমেরিকায় খবর নেন বাজেট ঘাটতি কত। উন্নত দেশেও এর চেয়ে বেশি বাজেট ঘাটতি থাকে।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্বাধীনতার মহান স্থপতির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শনস্বরূপ সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান। নির্বাচন নিয়ে রিস্ক নিয়েছিলাম : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর একটা চক্রান্ত ছিল। যার জন্য আমরা এবার একটা রিস্ক নিয়েছিলাম। রিস্কটা হলো, আমি নির্বাচনটা ওপেন করে দিয়েছিলাম। আমি নমিনেশন দিলাম সত্য, কিন্তু সেই সঙ্গে ওপেন করে দিয়ে বললাম, যে কেউ চাইলেই দাঁড়াতে পারে। হয়তো এমন হতে পারত, যারা দাঁড়িয়েছে তারাই বেশি আসন পেল, আমরা পার্টিগতভাবে কম পেলাম। কিন্তু সেটা হয়নি। তবে এই ওপেন করে দেওয়াতে যেটা হয়েছে তা হলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা এককভাবে ২৩৩টা আসন পেয়েছিলাম, এবার ২২৩টা পেয়েছি। কারণ আমাদের স্বতন্ত্র অনেকেই জয়ী হয়ে এসেছেন। গতকাল রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটিই উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রথম বৈঠক। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর, নুরুল ইসলাম নাহিদ, খন্দকার গোলাম মওলা নকশাবন্দিসহ উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের নেতারা টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত নতুন বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের বাজেটের সফল বাস্তবায়ন হবে বলেও তারা আশা ব্যক্ত করেন।

সর্বশেষ খবর