শিরোনাম
রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেনজীরের রিসোর্ট জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে

রিসোর্টের ৬০০ কেজি মাছ চুরি করে বিক্রির চেষ্টা, দুদকের মামলা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

বেনজীরের রিসোর্ট জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে

গোপালগঞ্জে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের গড়ে তোলা সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আদালতের নির্দেশে রিসিভার নিয়োগ করে গতকাল থেকে পার্কের যাবতীয় কার্যক্রম চালু করা হয়।

এদিকে পার্কের পুকুর থেকে প্রায় ৬০০ কেজি মাছ চুরি করে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে ওই পার্কের মৎস্য হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামের (৫০) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি দল পার্কে অবস্থান নেয়। পরে পার্কের ভিতর প্রবেশ করে বেনজীর ও তার পরিবারের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পার্কের প্রধান ফটকের পাশে মাইকিং করে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেন কর্মকর্তারা। এ অভিযানে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাবলী শবনম, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান, সহকারী পরিচালক সোহরাব হোসেন সোহেল, দুদক মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান ও গোপালগঞ্জ জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগানসহ জেলা প্রশাসন ও দুদক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং ২০২০ সাল থেকে থেকে ২০২২ পর্যন্ত আইজিপি থাকাকালীন বেনজীর আহমেদ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল গ্রামে ৬২১ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক।

এদিকে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের পুকুর থেকে মাছ চুরির অভিযোগে ওই পার্কের মৎস্য হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামসহ আরও চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. সোহরাব হোসেন সোহেল বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় এ মামলা করেন। দুদকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ, ঢাকার পারমিশন পিটিশন নম্বর ২৬৯/২০২৪ সংক্রান্তে গত ২৩ মে ১ নম্বর আদেশ আনুযায়ী পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, বিধিমালা-২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী ক্রোক করা হয়। ওই পার্কের তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থায় ক্রোককৃত সম্পত্তির মধ্যে রিসোর্টের ভিতরে অবস্থিত পুকুরের মাছসহ বিভিন্ন সম্পদ (শুক্রবার সন্ধ্যায়) চুরি করছেন বলে গোপন সূত্রে খবর পায় দুদক। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে কর্তৃপক্ষ সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেন। দুদক কর্মকর্তা গিয়ে রিসোর্টের অভ্যন্তরের ২০ একরের একটি পুকুরে মাছ ধরতে দেখেন। দুদক টিমকে দেখে আসামি ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যান। মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ওই রিসোর্টের মৎস্য হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামের নির্দেশে তারা মাছ ধরছেন। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় ৫৫৫ কেজি তেলাপিয়া মাছ ও সাড়ে ৩৭ কেজি কাতল মাছ জব্দ করে এবং গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাবলী শবনম ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম সোহেল রিগানের উপস্থিতিতে ৮৩ হাজার ৭৫৪ টাকায় ওই মাছ নিলামে বিক্রি করা হয়। ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, আসামি সফিকুলকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর