শিরোনাম
রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কলকাতায় ১৪ দিনের রিমান্ডে সিয়াম

ভারতে এমপি আনার খুন রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা, কলকাতা ও ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

কলকাতায় ১৪ দিনের রিমান্ডে সিয়াম

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ রহস্যের ঘটনায় গ্রেফতার সিয়াম হোসেনকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বারাসাত আদালতের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশ-সিআইডি তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। অন্যদিকে সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ডিবি পুলিশের টিম ফের কলকাতা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তদন্তসংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, যেহেতু এমপি আনারের লাশের খন্ডিতাংশ গুম করার দায়িত্বে ছিলেন সিয়াম, সেহেতু তার দেওয়া তথ্যে মৃতদেহের কিছু অংশ হলেও পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদারসহ সাতজন পুলিশি নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সিয়ামকে রিমান্ডে নেওয়া প্রসঙ্গে বারাসাত আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মন্দাক্রান্তা মুখার্জি জানান, এমপি আনারের মৃতদেহের টুকরোর সন্ধান, হত্যায় কী কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলো উদ্ধারসহ তদন্তে গতি আনতেই সিয়ামকে ১৪ দিনের রিমান্ডে চেয়েছিল সিআইডি। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। সিয়ামের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ধারা যুক্ত করা হবে। কলকাতা সিআইডির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, শুক্রবার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ এলাকা থেকে সিয়ামকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্যপ্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা)- এ চার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সিয়াম। তার বয়স ৩৩ বছর। সিয়ামের বাবার নাম আলাউদ্দিন বালি। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ হত্যাকান্ডে সিয়ামের জড়িত থাকার বিষয়টি জানতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, এ মামলার অন্যতম আসামি জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার পর ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন আদালত। গত শুক্রবার তাকে বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতে তোলা হলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর বিশ্বাস এ নির্দেশ দেন। বর্তমানে দমদমের কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন জিহাদ। সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতের অনুমতি নিয়ে কারাগারে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।

এদিকে সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ পুলিশের টিম আবারও কলকাতা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। গতকাল নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডে যে বা যারাই জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদকে আটক করা হয়েছে। তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে এখনো তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা পেলেই গ্রেফতার দেখানো হবে।

সঞ্জীভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা মাংসের ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য এমপির পরিবারের সদস্যরা খুব দ্রুত ভারতে যাবেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া ভারতের তদন্ত কর্মকর্তারাও পরিবারের সদস্যদের নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়েছেন। শিগগিরই তারা ডাকবেন। যদি তারা ডাকেন তবে ধরে নিতে হবে ডিএনএ টেস্টের জন্য ডেকেছেন। বাংলাদেশের সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা করা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু হয় নাই আর প্রশ্নও উঠেছে সেখানে যাচ্ছে। আমি মনে করি, সেখানে গেলে কম সময়ের ভিতরে হয়ে যাবে।

মূলহোতা আক্তারুজ্জামান শাহিনকে ফেরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাহিন নেপাল থেকে দুবাই হয়ে আমেরিকা চলে গেছে। ভারতে যখন ছিলাম সেখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে, বৈঠক হয়েছে। যেহেতু ভারতে হত্যা হয়েছে সেহেতু শাহিন তাদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। আমরাও কাজ করছি, তারাও কাজ করছে। আমরা পুলিশ সদর দফতরের এনসিবিতে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তারা হয়তো ইন্টারপোলের কাছে এসব বিষয় জানিয়েছে। বাংলাদেশের অ্যাম্বাসির সঙ্গে আমরা কথা বলছি। তবে এটুকু বলতে পারি, আনার হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা যেখানে যেভাবে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সঞ্জীভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে গত ২৮ মে উদ্ধার করা হাড়-মাংসের ফরেনসিক পরীক্ষা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাব। এ পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিকে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। ওই হাড়-মাংস মানুষের কি না, তা নিশ্চিত না হওয়ায় আনারের স্বজনদের সঙ্গে সেগুলোর ডিএনও নমুনা মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে না। তাই ভারতের ভিসা পেলেও ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিতে এখনো কলকাতায় ডাকা হয়নি সংসদ সদস্যের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ও ভাইকে।

ঝিনাইদহে পুলিশি নজরদারি নিয়ে নানা গুঞ্জন : এমপি আনার নিখোঁজের ঘটনায় ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদারসহ সাতজন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু আটক হওয়ায় এ বিষয়টি ডালপালা মেলছে। অন্যদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকারীদের শনাক্ত ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সকালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নের নারিকেল বাড়িয়া বাজারে ও বিকালে কালীগঞ্জের ত্রিলোচানপুর ইউনিয়নে পৃথক দুটি মানববন্ধন হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বাবু আটক হওয়ায় এমপি আনারের সঙ্গে বিরোধ আছে এমন অনেক নেতাও ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত শাহিনের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের বিলাসবহুল বাগানবাড়ি ও রিসোর্ট উদ্বোধনের সময় বাবুর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা বিশাল গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। পরে তিনি রহস্যজনক নিখোঁজ হন। এক পর্যায়ে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বন্ধু শাহিনের পরিকল্পনায় ১৩ মে তিনি কলকাতায় সঞ্জীভা গার্ডেনসে খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ এ পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে আমানুল্লাহ সাইদ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান নামের তিনজন গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশে। জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

সর্বশেষ খবর