রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
সেমিনারে অভিমত

নির্বাচনব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনবিষয়ক সেমিনারে অংশ নিয়ে দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, পুরো নির্বাচনব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। নির্বাচনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতার কারণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন, স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ওপর সংসদ সদস্যদের প্রভাব দূর করার পরামর্শ দেন তাঁরা। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে চ্যালেঞ্জ ও নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ। বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এমপি, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন, বেগম কবিতা খানম, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আবদুল আলীম। সভাপতিত্ব করেন আরএফইডির সভাপতি একরামুল হক সায়েম। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার কথা ছিল না। রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতা রাখতে নির্বাচনে প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়। দলীয় প্রতীক দেওয়ার অর্থ হচ্ছে যাকে মনোনয়ন দেব, তাকে ভোট দেবেন। তিনি বলেন, এখন পুরো নির্বাচনব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। একটি দলের সুবিধা-অসুবিধার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আনা হয়েছিল। এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের প্রয়োজন নেই। আগে যেভাবে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হতো, সেভাবেই হওয়া ভালো। সাবেক নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, নির্দলীয় বা দলীয় প্রতীক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘ফ্যাক্ট’ নয়, রাজনৈতিক শিষ্টাচারই বড় কথা। আইনের অস্পষ্টতা ও অসংগতি উপজেলা পরিষদকে অকার্যকর করার জন্য দায়ী। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকা শহরে জনগণকে সেবা দিতে হলে নগর সরকারের বিকল্প নেই। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুই কারণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা দুর্বল হয়। এক. সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ, দুই. প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ। স্থানীয় উন্নয়নে সংসদ সদস্যদের যুক্ত করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সব উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে করা উচিত। ড. আবদুল আলীম বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি, সব দল অংশ নেয়নি। ভোটার উপস্থিতি ৪০ শতাংশের কম। নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক করা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। এজন্য রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন সংশোধন করতে হবে। সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জন্য পৃথক আইন রয়েছে। এসব একীভূত করে একটি আইন করা দরকার। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক বিধিমালা করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে। যারা নির্বাচন করেন, তারা নিরপেক্ষ নন। রাজনীতি দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে। সমস্যা প্রতীকে নয়, রাজনীতিতে। এ ছাড়া একক তফসিলে একই দিনে ভোট করা হলে নির্বাচনি খরচ কমবে।

সর্বশেষ খবর