সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভা ৭২ সদস্যের, মমতার বর্জন, গেলেন কংগ্রেস সভাপতি, উপস্থিত প্রতিবেশী দেশের প্রধানরা

শঙ্কা নিয়েই মোদির নতুন যাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

শঙ্কা নিয়েই মোদির নতুন যাত্রা

শপথের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রতিবেশী দেশের প্রধানদের মঞ্চে ডেকে নেন নরেন্দ্র মোদি -পিআইডি

ক্ষমতার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করা না করার শঙ্কা নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি। গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে উন্মুক্ত ময়দানে প্রায় ১০ হাজার দেশি-বিদেশি অতিথির সামনে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান।

শপথ গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনাসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের মঞ্চে ডেকে নেন নরেন্দ্র মোদি।

আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল মোদির নতুন জোটের মন্ত্রিসভায় কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন তা নিয়ে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতি ভবনে বসে চাঁদের হাট। উপস্থিত হন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। উপস্থিত ছিলেন শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমারসহ বলিউড নায়ক থেকে ভারতের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা।

জওহরলাল নেহরুর পর বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে বেশকিছু চাপের মধ্যে ছিলেন মোদি। টানা দুই দিন জোটের শরিকদের সঙ্গে চলেছে মন্ত্রণালয় নিয়ে দরকষাকষি। শেষ পর্যন্ত সকালে সম্ভাব্য মন্ত্রীদের নিয়ে মোদি চা চক্রের আয়োজন করেছিলেন নিজ বাসভবনে। পরে সকালে তিনি প্রথমে যান রাজঘাটে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে তিনি যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির স্মৃতিসৌধ ‘সদৈব অটল’-এ। তারপর জাতীয় যুদ্ধ স্মারক। প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন প্রধানকে পাশে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া বীর সেনানীদের। 

বিজেপি সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মন্ত্রণালয় নিজেদের হাতেই রাখছেন তারা। অন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বেশকিছু বণ্টন করা হতে পারে শরিক দল চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি, নীতীশ কুমারের জেডিইউ, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি (আর), একনাথ শিন্ডের শিবসেনা, এইচডি দেবগৌড়ার জেডিএস এবং জয়ন্ত চৌধুরীর আরএলডির মধ্যে।

৭২ সদস্যের মন্ত্রিসভা : সন্ধ্যায় মোদির শপথের পরপরই ৭২ সদস্যের মন্ত্রিসভার সদস্যরা পৃথকভাবে শপথ নেন। বিদায়ী মন্ত্রিসভার মতোই নতুন মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই পেয়েছেন বিজেপির রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নির্মলা সীতারমন, পীযূষ গয়াল, এস জয়শঙ্কর। চা-চক্রে হাজির ছিলেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে ফের তাকে মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া ৩০ জন পূর্ণ মন্ত্রীর মধ্যে বিজেপির ২৫ জন। এদের মধ্যে গুজরাট থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সাংসদ এস জয়শঙ্কর, সাকিন তামিলনাড়ুর নির্মলা সীতারমন, হিমাচল প্রদেশের নেতা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা রয়েছেন। রয়েছেন রাজস্থানের অশ্বিনী বৈষ্ণো, পাঞ্জাবের হরদীপ সিংহ পুরী। লোকসভা সাংসদদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের রাজনাথ সিং, গুজরাটের অমিত শাহ, মনসুখ মা-বীয়, সিআর পাতিল, মহারাষ্ট্রের নিতিন গডকড়ী, পীযূষ গয়াল, আসামের সর্বানন্দ সোনোয়াল, কর্ণাটকের প্রহ্লাদ জোশী, হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টর, ওড়িশায় ধর্মেন্দ্র প্রধান, জুয়েল ওরাঁও, মধ্যপ্রদেশের বীরেন্দ্র কুমার, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, শিবরাজ সিংহ চৌহান, রাজস্থানের ভূপেন্দ্র যাদব, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, বিহারের গিরিরাজ সিংহ, ঝাড়খন্ডের অন্নপূর্ণা দেবী, তেলেঙ্গানার জি কিষাণ রেড্ডি।

সহযোগী দলের পাঁচ পূর্ণ মন্ত্রীর তালিকায় তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-এর কিঞ্জারাপু রামমোহন নাইডু, জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-এর রাজীবরঞ্জন (লল্লন) সিংহ, জনতা দল সেকুলার (জেডিএস)-এর এইচডি কুমারস্বামী, লোক জনশক্তি পার্টি রামবিলাস (এলজেপি)-এর চিরাগ পাসোয়ান, হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চা (হাম)-এর জিতনরাম মাঝি রয়েছেন।

সহযোগী দলের ছয়জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে শিবসেনার প্রতাপরাও যাদব, রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি)-এর জয়ন্ত চৌধুরী, রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়া অঠওয়ালে (আরপিআই-এ)-এর রামদাস অঠওয়ালে, জেডিইউর রামনাথ ঠাকুর, আপনা দল (সোনেলাল)-এর অনুপ্রিয়া প্যাটেল, টিডিপির চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি।

বিজেপি থেকে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ৩৫ জন। পশ্চিমবঙ্গের শান্তনু ঠাকুর, সুকান্ত মজুমদার ছাড়া তালিকায় রয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের জিতেন্দ্র সিংহ, রাজস্থানের অর্জুন রাম মেঘওয়াল, ভগীরথ চৌধুরী, মহারাষ্ট্রের মুরলীধর  মোহল, উত্তরপ্রদেশের জিতিন প্রসাদ, পঙ্কজ চৌধুরী, এসপি সিংহ বঘেল, কীর্তিবর্ধন সিংহ, বিএল বর্মা, কমলেশ পাসোয়ান, গোয়ার শ্রীপদ নায়েক, দিল্লির হর্ষ মলহোত্র, অন্ধ্রপ্রদেশের ভূপতিরাজু শ্রীনিবাস বর্মা, ছত্তিশগড়ের  তোখন শাহু, হরিয়ানার কৃষ্ণপাল গুজ্জর, রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ, আসামের পবিত্র মার্গেরিটা, বিহারের নিত্যানন্দ রাই, সতীশচন্দ্র দুবে।

বিজেপির প্রতিমন্ত্রীদের তালিকায় কর্ণাটকের ভি সোমান্না, শোভা কারান্ডলাজে, কেরলের সুরেশ গোপী, তামিলনাড়ুর এল মুরুগান, উত্তরাখন্ডের অজয় টামটা, মহারাষ্ট্রের রক্ষা খড়সে, তেলেঙ্গানার বান্দি সঞ্জয় কুমার, ঝাড়খন্ডের সঞ্জয় শেঠ, মধ্যপ্রদেশের দুর্গাদাস উইকে ও সাবিত্রী ঠাকুর, গুজরাটের নিমুবেন বাহ্মনিয়া। পাঞ্জাবের রভনীত সিংহ বিট্টু এবং কেরলের জর্জ কুরিয়েন সংসদের কোনো কক্ষের সদস্য না হয়েও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন।

শপথ গ্রহণ শেষে ছিল জমজমাট ভোজের আয়োজন। রাজস্থানের বিশেষ সবজি, দম বিরিয়ানি, কুলফি, পাঁচ রকমের রুটি, পরোটা। এ ছাড়া পাঞ্জাবি খাবারদাবারও ছিল তালিকায়। সেই সঙ্গে বাজরার খিচুড়িও। শেষে আট রকমের মিষ্টি। রসমালাই, ছানার মিষ্টি, রাজস্থানের বিখ্যাত ঘেওয়ার। শপথ গ্রহণের পর এসব পদ দিয়েই নৈশভোজ সেরেছেন নরেন্দ্র মোদি, তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসহ এনডিএর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। তাদের জন্য ভোজসভার আয়োজন করেছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। সেখানেই হয় এসব খাওয়া-দাওয়া।

মমতা বললেন, সরকার টিকবে না ১৫ দিনও : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গতকাল পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাটে সংবাদ সম্মেলন করে মন্তব্য করেছেন, নতুন ইন্ডিয়া জোট শেষমেশ সরকার তৈরি করবে। মমতা বলেন, যারা ৪০০ পারের কথা বলতেন, তারা একার ক্ষমতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতাই অর্জন করতে পারেনি। এটা ভাববেন না যে ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠনের দাবি জানায়নি বলে কিছু অঘটন ঘটে যাবে না। আমরা এখন শুধু দেখছি। শেষমেশ নতুন ‘ইন্ডিয়া জোট’ সরকার তৈরি করবে। তার আগে কদিন না হয় ওরা সরকার চালিয়ে নিক’। খোঁচা দিয়ে মমতা বলেন, কখনো কখনো সরকার একদিন স্থায়ী হয়। কে বলতে পারে এ সরকার ১৫ দিন টিকবে কি না? মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে মমতাকে প্রশ্ন করা তিনি বলেন, আমন্ত্রণ পাইনি। পেলেও আমরা যেতাম না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এ সরকার অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকভাবে গঠন হচ্ছে। আমরা এ সরকারকে আমাদের শুভ কামনা দিতে পারছি না। তবে দেশ ও দেশের মানুষকে আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর