সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

দিল্লিতে ব্যস্ততা শেখ হাসিনার

♦ ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে আগ্রহ ♦ বিজেপি নেতা আদভানির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিল্লিতে ব্যস্ততা শেখ হাসিনার

এল কে আদভানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের ভিতর দিয়ে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে তাঁর আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আগ্রহের কথা জানান।

শেখ হাসিনা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘এর জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির প্রয়োজন এবং আমরা ইতোমধ্যেই ভারতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি।’

সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ভুটান বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ভুটান থেকে ভারতের ভূখন্ড দিয়ে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন এবং বিষয়টি ইতোমধ্যে ভারতের নজরে আনা হয়েছে। হাছান মাহমুদ বলেন, সৌজন্য সাক্ষাতের সময় দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিষয়াদি আলোচনায় উঠে আসে। তিনি বলেন, উভয় দেশ বিদ্যমান বহুমুখী সম্পর্ক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তার দেশে একটি বার্ন ইউনিট নির্মাণ এবং এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ভুটান বাংলাদেশের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কেননা ভুটান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। তিনি বলেন, আমরা ভুটানকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তিনি কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতকে দেওয়া জায়গার যথার্থ ব্যবহারের ওপর জোর দেন এবং আশা করেন ভুটান সেখানে শিল্প গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ভুটানের বিনিয়োগ চেয়েছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র কন্যা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর সাম্প্রতিক ভুটান সফরের কথা উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খানসহ অন্যরা বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। ভুটানের অবকাঠামো ও পরিবহনমন্ত্রী চন্দ্র বাহাদুর গুরুং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেরিং, ভারতে ভুটানের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল ভি. নামগিয়েল, মন্ত্রিপরিষদ সচিব কেসাং ডেকি এবং পররাষ্ট্র সচিব পেমা চোডেন, ভুটানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সে দেশে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের উন্মুক্ত স্থানে আয়োজিত শপথ অনুষ্ঠানে কন্যা সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে উপস্থিত হন তিনি।

এর আগে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজেপির ৯৬ বছর বয়সী সিনিয়র নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে তাঁর বাড়িতে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈঠকে উভয় নেতা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া তাঁরা কুশালাদি বিনিময় ও অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করেন। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে। রাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন তিনি।

দিল্লিজুড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-মোদির ব্যানার : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে দিল্লিজুড়ে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি সংবলিত ব্যানার। এসব ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘ভারতে স্বাগতম’। প্রথম ‘বিশিষ্ট’ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার নয়াদিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ ও গভীর বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও জোরদার করবে।

সর্বশেষ খবর