সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

থানা পুলিশের ওপর হামলা

প্রতিদিন ডেস্ক

গ্রেফতারকৃত আসামিকে ছিনিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম ও ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে হামলা চালিয়ে চট্টগামে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। একই উদ্দেশে শৈলকুপা থানায় হামলা করা হয়। এ ঘটনার সময় উভয় স্থানেই পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ফাঁকা গুলি চালায়। সংঘর্ষে পুলিশসহ ৪৫ জন আহত হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সিএমপির বন্দর জোনের উপকমিশনার শাকিল সুলতানা বলেন, কর্ণফুলী থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার আসামিকে গ্রেফতার করতে যৌথ অভিযানে যায় সিএমপির কর্ণফুলী থানা পুলিশ ও জেলার আনোয়ারা থানা পুলিশ। মামলার ১ নম্বর আসামি মোজাম্মেল হককে আটক করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিলে তাকে ছিনিয়ে নেয়। তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। হামলায় কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেন এবং আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদসহ পুলিশের অন্তত ১৫ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানা পুলিশ বাদী হয়ে আনোয়ারা থানায় মামলা দায়ের করেছে। কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেন বলেন, ‘আমরা কর্ণফুলী থানায় দায়ের হওয়া মামলার এক আসামিকে গ্রেফতার করতে যাই। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার অনুসারীরা হামলা শুরু করে। একপর্যায়ে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। এরপর চৌমুহনী বাজার থেকে এসআরএফের একটি গাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে তারা আবার হামলা করে। এ সময় আরও পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।’ জানা গেছে, শনিবার রাতে চাতরি চৌমুহনী এলাকায় এক আসামিকে গ্রেফতার করতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা থানা পুলিশ। আসামি মোজাম্মেল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় তার অনুসারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। দুই দফায় চালানো এ হামলায় পুলিশের ১৫ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আনোয়ারা সার্কেলের সহকারী কমিশনার সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কয়েকশ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীদের মধ্যে গত শুক্রবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সদ্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মোস্তাক শিকদার নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে ছাড়িয়ে নিতে তার লোকজন থানায় হামলা চালায় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকালে ৮ নম্বর ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের একটি হামলার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি মোস্তাক শিকাদারকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর কয়েকশ সমর্থক তাকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় হামলা চালায়। পুলিশ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। ১০ মিনিটের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল ফিরোজ, হাসান, সোহান, ইমরান গুরুতর আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের শৈলকুপা ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে আনুমানিক ২০-২৫ জন হামলাকারী আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন হাসানুজ্জামান, সাত্তার শিকদার, সাইফুদ্দীন, সোনা মিয়া, জালাল উদ্দীন, আবদুুল ওহাব, ইমরান, ফারুক হোসেন, তুহিন, নাফিজ, সালামত, ইমন, এস এম রিয়াজুল, মুইম, জান্নাত হোসেন, আসাদুজ্জামান, ইমন শিকদার, ফিরোজ শিকদার, আলী আকবর, বায়োজিদ হোসেন, আজগার মন্ডল ও হারুন শিকদার। তাদের বাড়ি শৈলকুপা উপজেলায়। হামলাকারীরা সবাই নবনির্বাচিত শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু ও সংসদের উপনির্বাচনে বিজয়ী নায়েব আলী জোয়ারদার এমপির সমর্থক। মোস্তাক শিকদার ৮ নম্বর ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের মৃত আবদুস সাত্তার শিকদারের ছেলে।  হামলার ঘটনায় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু জানান, তিনি ঘটনার কোনো কিছুই জানেন না। হামলার সময় তিনি ঝিনাইদহে অবস্থান করছিলেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ইমরান জাকারিয়া জানান, এজাহার নামীয় আসামি মোস্তাক শিকদারকে গতকাল দুপুরে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পরপরই আসামির পক্ষে কয়েকশ উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাকে ছাড়িয়ে নিতে জোটবদ্ধ ভাবে থানায় হামলা চালায়। এ সময় তারা থানার প্রধান ফটক খুলে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের বাধা দিলে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ নিজেদের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় বাধ্য হয়ে শটগানের গুলি ছোড়ে। তবে পুলিশ কত রাউন্ড গুলি ছুড়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার স্থানীয় এমপি নায়েব আলী জোয়ারদার ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নুর উপস্থিতিতে শৈলকুপা পৌরসভার মেয়র কাজী আশরাফুল আজম থানার ওসি সফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে গলায় গামচা প্যাঁচিয়ে থানা থেকে বিতাড়ন করার হুমিক দেন। তার এই হুমকির দুই দিন পর থানায় এই হামলার ঘটনা ঘটল।

সর্বশেষ খবর