সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সোনা চোরাচালান বন্ধে উদ্যোগ নেই বাজেটে : বাজুস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রস্তাবিত বাজেটে সোনা চোরাচালান বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) ১৫ প্রস্তাবও বিবেচনা করা হয়নি।

অলংকার বিক্রির ভ্যাট ৫ থেকে ৩ শতাংশ করলে সরকারের আয় বাড়বে ১ হাজার কোটি টাকা। ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ঘুষ নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বাজুস। গতকাল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির বাজুস কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায়, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল ও বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য পবন কুমার আগরওয়ালা। আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে সোনা ও রুপার বার আনা বন্ধ করতে হবে। কারণ, ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে অবাধে সোনার বার বিদেশ থেকে দেশে আসছে। চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যদিও প্রকৃত অর্থে সোনা চোরাচালান বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে। তিনি বলেন, দেশের জুয়েলারি খাতকে পোশাক শিল্পের ন্যায় রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে পরিচিত করতে হলে এ খাতে বিনিয়োগকারীদের সরকারি প্রণোদনা ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কর রেয়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে তৈরি গহনা দেশে ও বিদেশে সমাদৃত। কিন্তু এ খাতের সঠিক পরিচর্যার অভাবে স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীরা কাজের অভাবে দুঃখ দুর্দশা, হতাশায় অমানবিক জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় কারিগররা পেশা বদলে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এই সংকট মোকাবিলায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান বাজুসের দাবি পূরণে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে জুয়েলারি শিল্পের সঙ্গে ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন। জুয়েলারি শিল্পে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে বাজুস যখন উৎসাহ দিচ্ছে, তখন এনবিআর নীতি সহায়তা দিয়ে এগিয়ে আসছে না। পাশাপাশি সারা দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করছে। ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুষ নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, সোনার অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক। তাতে একদিকে ক্রেতারা ভ্যাট প্রদানে উৎসাহী হওয়ার পাশাপাশি জুয়েলারি খাত থেকে আরও ১ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হবে। এ ছাড়াও নিবন্ধনকৃত সব জুয়েলারি দোকানে ইএফডি মেশিন বিতরণ করতে হবে। অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিকের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে আইআরসি-ধারী এবং ভ্যাট কমপ্ল্যায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু জুয়েলারি খাতের জন্য রেয়াতি হারে এক শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি-ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্কহার ৫ শতাংশ করা হোক। সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি। সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আনার সুযোগ দিলে এ শিল্পের কাঁচামালের জোগান নিরবচ্ছিন্ন থাকবে। ফলে এ শিল্প ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে। হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত রাফ ডায়মন্ডের প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ করা হোক। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জুয়েলারি শিল্পের আধুনিকায়ন প্রয়োজন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও ল্যাব গ্রাউন ডায়মন্ড জিআই বাজার বিস্তার লাভ করছে। বর্তমানে ভারতে ল্যাব গ্রাউন্ড ডায়মন্ডের বাজার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণের এবং দিন দিন এই অংক বাড়ছে। তাই বাজুস গ্রাউন ডায়মন্ড এইচ.এস কোড (৭১০৪.২১.১০) অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিচ্ছে। বৈধ পথে মসৃণ হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত মসৃণ হীরা ৪০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ করা হোক। আয়কর আইন ৪৬-(বিবি)(২) ধারার অধীনে গোল্ড রিফাইনারি শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদান করা হোক। সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ককর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদান। আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’র আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানাচ্ছে বাজুস। ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক সোনার বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাবনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একটি আইটেমের জুয়েলারি পণ্য দুটির বেশি আনা যাবে না এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যাগেজ রুলের সমন্বয় করার দাবি জানাচ্ছি। বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু অ্যাডিশন জিআই ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা চেয়েছে বাজুস। এইচ.এস. কোডভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্কহারগুলো হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্কহার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করা। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন ২০১৯ সালের ১০ নম্বর আইনে ১০২ ধারা বলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উদ্ধারকৃত সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করেছে বাজুস।

সর্বশেষ খবর