মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

হাসপাতাল এখন ব্যবসার খাত

ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ

হাসপাতাল এখন ব্যবসার খাত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেছেন, আমাদের দেশে হাসপাতাল মানে শুধু দালানকোঠা আর কিছু যন্ত্রপাতি। সেখানে উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত জনবলের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে এই সংকট আরও তীব্র। কেননা বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালে পূর্ণকালীন জনবল খুব কম। তারা মূলত চলে সরকারি খাতের জনবলের দ্বৈত প্র্যাকটিসের ওপর নির্ভর করে। বেশির ভাগই অতি মুনাফালোভী। এই অদক্ষ এবং মুনাফালোভীদের হাতে পড়ে জীবন দিয়ে খেসারত দিতে হচ্ছে রোগীকে। তিনি আরও বলেন, মেডিকেল শিক্ষাকে হাইস্কুল মানের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত ১০-১৫ বছরে যারা মেডিকেল কলেজগুলো থেকে পড়াশোনা করে বের হয়েছে তাদের অনেকেই পড়াশোনার উপযুক্ত শিক্ষক, ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ এবং পরিবেশ পায়নি। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনেকগুলোর অবস্থা তো একেবারেই বেহাল। পর্যাপ্ত পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের অভাবে এই চিকিৎসকরা গুণগতমানের চিকিৎসা দিতে পারছে না। সরকারি হাসপাতালে অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ে যে চিকিৎসকরা এখন আছেন তাদের মান এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। সরকারি হাসপাতালে পদোন্নতি পেতে গেলে নির্দিষ্ট ডিগ্রি এবং ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। ফলে সেখানে এখনো চিকিৎসার মান বজায় আছে। কিন্তু কয়েক বছর পরে মানহীন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা ডাক্তাররা যখন মূল জনবল হবে তখনই বাধবে বিপত্তি। বেসরকারিতে তো ইতোমধ্যেই অভিযোগের অন্ত নেই। শিক্ষার মানের এই যাচ্ছেতাই অবস্থার খেসারত দিচ্ছে রোগীরা। এই সমস্যার সমাধানে করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সরকারি খাতের ডাক্তারদের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ৬০-৭০ শতাংশ নিজস্ব এবং পূর্ণকালীন জনবল দিয়ে পরিচালনা করতে বাধ্য করতে হবে। এসব চিকিৎসকের ছয় মাস কিংবা এক বছরের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজে এ ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ খরচ সরকারকেই দিতে হবে। আমি মনে করি, একটা বোয়িং বিমান কেনার চেয়ে এ খরচ বেশি হবে না। এর ফলে বাঁচবে লাখ লাখ রোগীর জীবন। দেশের বাইরে রোগী যাওয়া অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমে যাবে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। অন্যদিকে ডাক্তারদের বেকারত্ব অনেকাংশে কমে যাবে। টারশিয়ারি হাসপাতাল জনবল নেই - এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। শুধু চাকচিক্য আর সুন্দর বসার জায়গা দিয়ে রোগীর জীবন বাঁচবে না। জনগণকেও এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে। তাদেরও সচেতন হতে হবে।

সর্বশেষ খবর