মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, দুর্নীতি প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। দুদকের একার পক্ষে সব ধরনের দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করছে না। তারা ব্যবস্থা নিলে এত অভিযোগ দুদকে আসত না। তাদের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে দুদকে অভিযোগ কম আসবে, দুদক এটাই চায়। সবক্ষেত্রে দুর্নীতি যেন না হয় তার জন্য প্রতিরোধ করা জরুরি। সাংবাদিকরা যে কাজ করেন আর দুদক যে কাজ করে, এসব কাজে একে অপরের পরিপূরক। গতকাল বেলা ৩টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২০-২০২১ এর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব বলেন তিনি। এ সময় দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক, মোছা. আছিয়া খাতুন, দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন, জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজয়ী ১২ জন সাংবাদিক দুদক চেয়ারম্যানের হাত থেকে ক্রেস্ট, সনদ ও আর্থিক সম্মানি গ্রহণ করেন। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বেনজীর সাহেব উপস্থিত হইল কি হইল না সেটা দেখার বিষয় না। অন্য দশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যা হয়, তারও ক্ষেত্রে সেটা হবে। কোনো অভিযোগ পেলেই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনার চেষ্টা করি ন্যায়বিচারের স্বার্থে। তিনি যেন কখনো বলতে না পারেন যে, আমরা তার কথা শুনিনি। শুনলে এ তথ্য দিতাম তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হইতো না। সে আবেদন করুক বা না করুক, সে যদি ওই তারিখে হাজির না হইতে পারে, অটো শতভাগ ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ৫ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন সময় দিয়ে থাকেন’। তিনি বলেন, বেনজীর সাহেবের দুর্নীতির খবর যখন প্রকাশ হয় তখন আমাদের একজন কমিশনার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। তিনজন আমরা একত্র হতে পারিনি। যখন তিনজন একত্র হই পরদিনই আমরা অনুসন্ধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই এবং অনুসন্ধান কমিটি গঠন করি। তার কোথায় কী পরিমাণ জমি আছে তা জানতে এবং তথ্য নিতে সাব-রেজিস্ট্রার এবং এসি ল্যান্ড অফিসে চিঠি দেই। এসব তথ্য না পেলে তো কোর্টে যেতে পারব না। অ্যাকাউন্টের তথ্য বিএফআইইউ থেকে আনতে হয়েছে। সব তথ্য পাওয়ার পর মাঝখানে এক দিন বন্ধ ছিল, এর পরদিনই আমরা সব ফ্রিজ করে দিয়েছি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, অথচ আপনারা বলেন- দুদক তার টাকা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। তারপর লোকদেখানোর জন্য ফ্রিজ করে দিয়েছে। মাঝখানে শুধু এক দিন ২২ মে বন্ধ ছিল সব তথ্য পাওয়ার পর। আদালতের অনুমতি নিয়ে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করতে হয়। দুদক একাই তা বন্ধ করতে পারে না।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির সমস্ত পয়েন্ট খুলে দিয়ে বসে আছেন, আর পরে বলছেন দুর্নীতি দমন কমিশন কিছুই করছে না। এটা আপনাদের চিন্তা করার বিষয়। এই যে বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হয়, তাদের কন্ট্রোলিং অফিসারদের কি কোনো দায়িত্ব নেই? এটা তাদের দক্ষতার ও বিচক্ষণতার অভাব না? ধরেন কোনো ডিপার্টমেন্টের মধ্যম সারির অফিসার দুর্নীতি করল তার সুপারভাইজিং অফিসারের এটা তদারকি করার কথা ছিল না? এটা দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত কেন আসতে হবে। তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যদি দুর্নীতি দমন কমিশনের লোড কমানো যায় তাহলে আপনারা যেটা চান সেটার কাছাকাছি যেতে পারব। এদিকে সবাই সব ছেড়ে দিয়ে বসে আছে আর বলছে দুর্নীতি দমন কমিশন কিছুই করছে না। দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা খুবই কষ্টকর। যারা দুর্নীতির মধ্যে নিজেদের সম্পৃক্ত করে ফেলেছে তাদের ফিরিয়ে আনা কষ্টকর। তবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। যারা আগামী দিনের বিভিন্ন পেশায় যাবে তাদের টার্গেট করা দরকার, যাতে তারা দুর্নীতিতে না যায়। এটাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, সমাজে যাদের ক্ষমতা আছে তারাই দুর্নীতি করে। আপনারা সিআইপি, ভিআইপি যাদের সম্মান দিয়ে এগিয়ে আনতে যান তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে তাদের মুখ উন্মোচন করতে হবে। সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের ভয় পেলে চলবে না। কালোকে সর্বদা কালো বলতে হবে, লেখনীতে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে।

দুদকের অপর কমিশনার মোছা. আছিয়া খাতুন বলেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য সুন্দর একটি প্রজন্ম রেখে যেতে হবে। এজন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রতিযোগিতার জন্য জমা হওয়া প্রতিবেদনগুলোতে দুর্নীতির অনেক তথ্য-উপাত্ত এসেছে, সেগুলো দুদক আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চালালে দুর্নীতিবাজরা আতঙ্কে থাকবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকরা তাদের কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবেন।

সর্বশেষ খবর