বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

পুলিশ কাউসারের অসুস্থতার বিষয়টি জানত : আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে দায়িত্ব পালনকালে সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা কনস্টেবল কাউসার আলীর মানসিক অসুস্থতার কথা জানত পুলিশ। এ কারণে তিনি যে চিকিৎসা নিয়েছিলেন সে বিষয়েও অবগত ছিল পুলিশ। ডাক্তার সুস্থতার সার্টিফিকেট দেওয়ার কারণেই তাকে চাকরিতে যোগদান করানো হয়। গতকাল রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, একজন ডাক্তার তাকে সার্টিফিকেট দিলে তাকে ডিউটিতে নেওয়া হয়। এখন এ বিষয়গুলোতে আমাদের আরও সতর্কতার প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি। শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ফিলিস্তিন দূতাবাসের উত্তর পাশের গার্ডরুমের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় কাউসার এসএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। এ সময় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখও গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় নিহত মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় তিনটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে আনতে ডিসি গুলশান রিফাত রহমান শামীমকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। কমিটির কাজ হবে ঘটনার নেপথ্য কারণ উদঘাটন, ঘটনার দায়িত্ব নিরূপণ ও ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ।

এদিকে, পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, সেদিন রাত পৌনে ১২টার দিকে কাউসার আলীর সঙ্গে ‘ডিউটি করা নিয়ে’ মনিরুলের বাগবিতন্ডা হয়েছিল। একপর্যায়ে কাউসার উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পুলিশি হেফাজতে আসার পর থেকেই অসংলগ্ন আচরণ করছেন কাউসার। একা একা বিরবির করে কথা বলছেন। মাঝেমাঝেই বিবস্ত্র হয়ে হাজত খানার মেঝেতে শুয়ে থাকছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করলে কোনো উত্তর দিচ্ছেন না। তার এহেন আচরণে রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন তদন্ত তদারক কর্মকর্তারা।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, তাওরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে কাউসার গুলি করেন। তার কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল। প্রতিটি ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে ৮ রাউন্ড গুলি করে। পরের ওই ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে। কাউসার আলীর বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের দৌলতখালী দাড়ের পাড়া গ্রামে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়াত আলী মাস্টারের ছোট ছেলে তিনি। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, কাউসার ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১০ সালের দিকে তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয়। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতেন না এবং অল্পেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন। চাকরিরত অবস্থায় এ ধরনের উপসর্গের কারণে তাকে কয়েক দফা চিকিৎসাও করানো হয়। তবে কাউসার মাদকাসক্ত ‘ছিলেন না’ এবং পারিবারিকভাবে তেমন কোনো ‘সমস্যাও ছিল না’ বলে তার স্বজনদের ভাষ্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর