বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিচার শুরু ড. ইউনূসের

কেন পশুর মতো খাঁচায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে : ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার শুরু ড. ইউনূসের

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৫ জুলাই দিন ধার্য করেছেন। এ সময় ড. ইউনূসসহ আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। এর  আগে ২ জুন এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়। এদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সভ্য দেশের নাগরিককে কেন পশুর মতো খাঁচায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? আজকে সারাক্ষণ খাঁচার ভিতর ছিলাম। আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে তাদের খাঁচার ভিতরে রাখা ন্যায্য হলো কি না? অভিযোগ গঠন শেষে আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, এটা আমার কাছে গর্হিত কাজ মনে হয়। এ বিষয়ে সবাই আওয়াজ তুলুন। একটা সভ্য দেশে নাগরিককে কেন পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? যেখানে বিচার শুরু হয়নি। অপরাধ সাব্যস্ত হয়নি। এদিন আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ড. ইউনূস ছাড়া অন্য আসামিদের কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়াতে। তবে ড. ইউনূস নিজেও কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। এরপর ড. ইউনূস এজলাস থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

অন্যদিকে ড. ইউনূসকে হয়রানি করা হচ্ছে দাবি করে অবিলম্বে এই হয়রানি বন্ধ করতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বিএনপির এই যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, লোকজন বলে নোবেল পুরস্কার পাওয়াই ড. ইউনূসের অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে অপমান, হয়রানি করা হচ্ছে। তার মতো সম্মানিত মানুষকে লোহার খাঁচায় পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে।

সরকারি কর্মচারী কর্তৃক বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ড. ইউনূস যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন বলে জানিয়েছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল। এদিন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। দুদকের আইনজীবী বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ১০৭ ধারায় সরকারি কর্মচারী কর্তৃক বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আছে। আদালতে এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হবে। এতে সর্বনিম্ন ১০ বছরের কারাদন্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মানিলন্ডারিং আইনে সর্বনিম্ন ৪ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছরের সাজা হবে। এ বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণের পর আদালতে নিষ্পত্তির বিষয় আছে।

ড. ইউনূসকে আদালতের কাঠগড়ায় (লোহার খাঁচা) রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত মানুষ। আমরা কখনোই তার অসম্মান চাইনি। তাকে বারবার বলেছি, আপনি খাঁচার ভিতরে না থেকে আমাদের এখানে আসেন, এখানে বসেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, অন্যদের মতো তিনিও তাদের সঙ্গে থাকবেন। আদালতে আসতে অস্বস্তিবোধ করলে উনি ভিডিও কলেও যুক্ত থাকতে পারেন।

ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশেই হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ গঠনের মতো কোনো উপাদান ছিল না মামলাটিতে। আমরা এই অভিযোগ গঠন আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। তিনি গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রথমে আসামি ১৩ জন থাকলেও চার্জশিটে নতুন একজন আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে গত ২ জুন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে শুনানি করেন। অন্যদিকে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের পক্ষের আইনজীবী অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য গতকালের দিন ধার্য করেন।

সর্বশেষ খবর