বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
সিপিডির আলোচনা

অর্থনীতির এত দুর্বল অবস্থা আগে কখনো ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অর্থনীতি এত দুর্বল অবস্থায় আগে কখনো ছিল না। সুশাসন নিশ্চিত হলে ৯০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হবে। সুশাসনের জন্য দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। স্বাধীনতার বহু বছর পেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন কি বাস্তবায়ন হচ্ছে? গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বাজেট-২০২৪ সংলাপে অংশ নিয়ে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।

গতকাল রাজধানীর হোটেল লেকশোরে এ সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সিপিডির বোর্ড ট্রাস্টিজের ট্রেজারার, দেশের অন্যতম শিল্পোদ্যোক্তা এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ মান্নান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। বিশেষ আলোচক ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, দেশে সুশাসন (গভর্নেন্স) ঠিক হলে ৯০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হবে। আমাদের অনেক জায়গায় লিকেজ (ত্রুটি) আছে। এক্সপেনডিচারে (ব্যয়ে) যেমন লিকেজ আছে, তেমনি ইনকামের (আয়ের) ক্ষেত্রেও লিকেজ আছে।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্থনীতি মসৃণভাবে চলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে আমরা দুর্বল অবস্থানে চলে এসেছি। আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। দীর্ঘদিন ধরে সংসদেও আছি। আমার জানামতে এবারের চেয়ে দুর্বল অবস্থা আমরা কখনো দেখিনি। অথচ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য এ সময়টা দরকার ছিল খুব বেশি শক্তিশালী অবস্থান। উন্নয়নশীল হওয়ার জন্য আমাদের যথেষ্ট সমন্বয় (অ্যাডজাস্টমেন্ট) করতে হবে।

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান বলেন, এ মুহূর্তে কিছু মেগা প্রকল্প পিছিয়ে দেওয়া যেত। আমরা বাস করি ভূতলে কিন্তু বিনিয়োগ করি পাতালে। আমি মন্ত্রী থাকতে এমন অনেক প্রকল্প একনেকে পাস করতে হয়েছে যেগুলোর সঙ্গে আমি একমত ছিলাম না। দেশে এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে। জনগণের অর্থ কতটা জনকল্যাণে ব্যয় হচ্ছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। জনগণ এসব প্রকল্প থেকে কী পাচ্ছে কিংবা আদৌ পাচ্ছে কি না দেখা দরকার। তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষায় সংখ্যাগত দিক দিয়ে অনেক অর্জন করেছি। তবে খুব বেশি ভিতরে যেতে পারিনি। অনেক বাচ্চারা এখন স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে অনেকে সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি হাসপাতালের দিকে যাচ্ছে। তার মানে সরকারি হাসপাতালে তারা সেবা, সম্মান বা মনোযোগ পাচ্ছে না।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সুশাসন এবং উন্নয়নের কৌশলে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। গত এক দশক ধরে যে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে, সেখানে কর্মসংস্থান গুরুত্ব পাচ্ছে না। কর্মসংস্থান নিয়ে অনেক বেশি মনোযোগী হওয়া খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশ একটি অদক্ষতার ফাঁদের মধ্যে আটকে আছে। কারণ শিক্ষায় বিনিয়োগ সমন্বিত চিন্তা থেকে হয় না। শিক্ষার বিনিয়োগ যদি শুধু ভবন তৈরিতে হয়, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নতুন করে নামকরণ করা দরকার। শিক্ষা অবকাঠামো মন্ত্রণালয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে দুটি সোনার হাঁস আছে। একটি পরিশ্রমী উদ্যোক্তা, আরেকটি পরিশ্রমী অর্থনৈতিক কর্মী। প্রত্যেকেই চেষ্টা করে নিজের এবং দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে। কিন্তু সেই সোনার হাঁস কি আমরা লালন করছি, নাকি প্রত্যেকবারই জবাই দেওয়ার চেষ্টা চলছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন শিক্ষায় বিনিয়োগ, শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। বহু বছর পেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন কি বাস্তবায়ন হচ্ছে? সব জায়গায় মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করা হলেও শিক্ষায় কেন বরাদ্দ বাড়ানো হয় না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবকরা সর্বনিম্ন উপবৃত্তি মাসে ৫০০ টাকা দাবি করেছেন। বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে সোনা এবং ডায়মন্ডের কালো বাজার ৯০ হাজার কোটি টাকা। দেশে চোরাচালানের মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থের সোনা ও ডায়মন্ড আসে, সরকারের উচিত পরিমাণটা বের করা।

সর্বশেষ খবর