শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

পতনে তলানিতে শেয়ারবাজার

♦ ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত ♦ নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন লাখো বিনিয়োগকারী

আলী রিয়াজ

পতনে তলানিতে শেয়ারবাজার

টানা দরপতনে শেয়ারবাজার তলানির দিকে যাচ্ছে। ভয়াবহ দরপতনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারে মুনাফার জন্য বিনিয়োগ করে এখন মূলধন হারাতে বসেছেন লগ্নিকারীরা। শেয়ারবাজারে চরম আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। লোকসান কমাতে দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় রকমের আস্থার সংকট চলছে এখন শেয়ারবাজারে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যে অবকাঠামো থাকা উচিত সেটা গত কয়েক বছরে নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে ধরে রাখা যাচ্ছে না বাজারের নিয়ন্ত্রণ। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তারা মানি মার্কেটে যাচ্ছেন। এ কারণে শেয়ারবাজারে বড় তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

ভয়াবহ দরপতনে শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ঈদের আগে শেয়ারবাজারের এ চিত্রে দিশাহারা বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, রোজার ঈদের আগেও শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। রোজার ঈদের পর দু-এক দিন বাজার ভালো গেলেও দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। অনেকেই বিনিয়োগ করা পুঁজির ৫০ শতাংশের মতো হারিয়ে ফেলেছেন। বিনিয়োগকারীরা এখন চোখে শর্ষে ফুল  দেখছেন। সবারই দিশাহারা অবস্থা। বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষার  কোনো উপায়ের দেখা মিলছে না। জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে শেয়ারবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। করোনা মহামারির পর দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারের দাম এক জায়গায় আটকে রাখা হয়। এতে একটানা দরপতনে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত বছর থেকে ডলার সংকট শুরু হলে শেয়ারবাজারে দরপতন আরও প্রকট হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস (দর কমার নির্ধারিত সীমা) আরোপ করে। এরপর বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তবে চলতি বছরের গত জুনের আগের বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠলেও এরপর ফের ভয়াবহ পতনের দিকে ছুটে চলেছে শেয়ারবাজার।

বিএসইসি বিভিন্ন সময় নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর সাময়িক মূল্য সংশোধনের পর শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়। লেনদেন বেড়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে আসে। সূচক বেড়ে ২২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে যায়। ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়ে সাময়িক মূল্য সংশোধনের পর শেয়ারবাজার কিছুটা গতি ফিরে পায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় প্রায় প্রতিদিন বাড়তে থাকে মূল্যসূচক। এতে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে উঠে আসে। কিন্তু গত এক মাসের ব্যবধানে ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক এখন ৫ হাজার ১১৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। গত সপ্তাহের লেনদেনের পাঁচ দিনে ডিএসইর সূচক কমেছে ১২০ পয়েন্ট। সপ্তাহের লেনদেন শুরু হয় ৫ হাজার ২৩৭ পয়েন্ট দিয়ে। তিন দিনে সূচক কমে ১৬৭ পয়েন্ট। এভাবে প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর