শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কঠোর ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে সরতে চায় বিএনপি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

কঠোর ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে সরতে চায় বিএনপি

ভারতবিরোধী কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসতে চায় রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও ভারতবিরোধী অবস্থান বিএনপি দলগতভাবে আর জোরালো করবে না। বরং বৃহৎ প্রতিবেশী এ দেশটি সম্পর্কে বিএনপি আপাতত নীরব থাকার কৌশল নিয়েছে। সুযোগমতো দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বিএনপি।

জানতে চাইলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বিএনপি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। শুধু ভারত নয়, সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই বিএনপি সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ বাংলাদেশের এই পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতেই বিএনপি কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে ভারতের কোনো ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের জনগণ যদি ভারতবিরোধী হয়ে যায়, সেটি বিএনপির বিষয় নয়।

জানা গেছে, গত ২০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের পণ্য বর্জনের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান এবং ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রকাশ দেখান। ওইদিন নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের গায়ের কাশ্মীরি শাল ছুড়ে ফেলে দিলে নেতা-কর্মীরা তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর থেকেই বিএনপির ভারতবিরোধী অবস্থানের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দলগুলোর নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতেও ভারত-বিরোধিতার বিষয়টি উঠে আসে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, এমনকি ভারতের কোনো কোনো থিঙ্কট্যাংক সদস্যও এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ১৮ এপ্রিল রুহুল কবির রিজভী এক সভায় বলেন, ‘ভারতের পণ্য বর্জন বিষয়টি একটি সামাজিক আন্দোলন। ‘বিএনপির অনেকেই এ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। আমিও ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করেছি। এখানে দলের কোনো বিষয় নেই।’

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, বিএনপির অভিযোগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভারতের দৃশ্যমান পক্ষপাতিত্ব ছিল। দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দীর্ঘদিন কাজ করেও কোনো সুফল না পাওয়ায় নির্বাচনের পর ভারত-বিরোধিতাকে ফের সামনে আনেন দলের নেতারা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিপক্ষে ভারত। জনগণকেও ভারতবিরোধী অবস্থানে উদ্বুদ্ধ করার কৌশল নিয়েছিল দলটি। ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র করে জনগণের মধ্যে নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার কৌশলও নিয়েছিল ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন জোট ও দলের নেতা-কর্মী ভারতবিরোধী কর্মসূচি পালন করেন। ভারতীয় পণ্য বর্জনেরও ডাক দেয় বেশ কয়েকটি সংগঠন। এ ইস্যুতে অবশ্য বিএনপির হাইকমান্ডের মধ্যে বিভক্তি ছিল।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে বিএনপির হাইকমান্ড আবারও রাজপথের আন্দোলনে ফিরতে চান। সেজন্য একদিকে কৌশলগত কারণে ভারতবিরোধী ‘কঠোর অবস্থান’ থেকে সরে এসে মধ্যপন্থা অবলম্বনের ইঙ্গিত রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ভারতবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সায় মেলেনি। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও কোনো নির্দেশনা নেই। আবার অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও কৌশলগত সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গত মাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং সমমনা দলগুলোর বৈঠকে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা, স্থানীয়সহ অন্য নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান এবং সমমনা দল ও জোট নিয়ে তাদের মনোভাবের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক প্রভাবক হিসেবে ভারতের প্রসঙ্গও এসেছে। জোটের কয়েকজন নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচনের পর ভারতের বিরুদ্ধে বিএনপির যে মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল, কৌশলগত কারণে সেখান থেকে বিএনপি অনেকটা পিছুটান দিয়েছে। ভারতবিরোধী কর্মসূচি পালনে জোট নেতাদের ধীরে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আভাস দিয়েছিলেন যে বিএনপিতে ভারত-বিরোধিতা বাড়তে পারে। কারণ গত চারটি নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশে ভারত ছিল বলে মনে করে বিএনপি। দলটি এজন্য প্রতিটি নির্বাচনের আগেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ২০১৮ সালের জুনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভারত সফর করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপি ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কিছু অর্জন করা যাবে না। ভারত আজ বিএনপিকে সমর্থন করছে না, কিন্তু আগামীকাল যে করবে না, তার নিশ্চয়তা কী?

সর্বশেষ খবর