শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

হাতের টাকা ফিরছে ব্যাংকে

♦ ১০ মাসে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ২৭,৫৬৪ কোটি টাকা ♦ সুদ বাড়ায় ব্যাংকমুখী আমানতকারীরা

শাহেদ আলী ইরশাদ

সুদহার বাড়ায় আবারও ব্যাংকমুখী হতে শুরু করেছেন আমানতকারীরা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরেছে। অথচ এক বছর আগের একই সময়ে (২০২২-২৩) ২৬ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে ছিল। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে মোট টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুনে মানুষের হাতে ছিল প্রায় ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা বলছেন, আমানতের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় টাকা ফেরত আসছে ব্যাংকে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমানতকারীদের ব্যাংকে আগ্রহী করার জন্য তাদের আস্থা বৃদ্ধিসহ অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কিছু ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার কারণে গত নভেম্বর মাস থেকে ব্যাংক খাতের বাইরে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ঈদুল ফিতরের কারণেও ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়েছিল। অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করার ফলে গত এপ্রিল শেষে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে টাকার পরিমাণ ২১ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা কমে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটিতে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস শেষে ব্যাংক ব্যবস্থার আমানত উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ ২০২৩ সালের জুনের তুলনায় কমে গেছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এ সময়ের মধ্যে আমানতের এই বৃদ্ধিকে প্ররোচিত করতে পারে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, আমানতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি উদ্বেগজনক পর্যায়েই রয়ে গেছে। কারণ চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত আমানতের ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছিল। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত এক বছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল এবং এটি উদ্বেগজনক। কারণ এখনো ২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে রয়ে গেছে। ২০২২ সালের জুনে মানুষের হাতে ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় মেয়াদি আমানত ৯৬ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। তবে একই সময়ে সঞ্চয়ী আমানতের পরিমাণ ৯ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা কমে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ মে সুদের হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিন থেকেই ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক এবং ব্যাংকিং খাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য অর্থের সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে সুদহার নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। ফলে ঋণের সুদ অতিক্রম করেছে ১৪ শতাংশের ঘর। মেয়াদি আমানতের সুদও বেড়ে ৯ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে গত বছরের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ৯ শতাংশ প্রত্যাহার করে ছয় মাসের মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল (স্মার্ট) চালু করে।

সর্বশেষ খবর