শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নাফ সীমান্তে বিকট শব্দ, বিকল্প পথে গেল জাহাজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ আবারও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সীমান্তের ওপারে রাতভর একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওপার থেকে ভেসে আসা বিকট শব্দে টেকনাফ সীমান্তের মানুষ আতঙ্কে ঘুমাতে পারেনি। তবে ভোরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজটি একইস্থানে রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন নাফ সীমান্তের বাসিন্দারা।

এদিকে গতকাল দুপুরে দ্বীপবাসীর জন্য কক্সবাজার শহর থেকে খাদ্যপণ্য নিয়ে রওনা হয়েছে একটি জাহাজ। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পর ‘এমভি বার আউলিয়া’ জাহাজটি কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে যাত্রা করে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গত বুধবার  আনুমানিক রাত ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর ও রাতভর থেমে থেমে একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। যার ফলে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে নাফ সীমান্তে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে টেকনাফে আতঙ্ক আরও বাড়বে। টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে চলছে এ যুদ্ধ। তবে শুক্রবার ভোর থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান তারা। 

নাফ সীমান্তে বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর ও রাতভর মিয়ানমারের ওপার থেকে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। তবে আজ সকাল থেকে তেমন বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে না। নাফ নদের মিয়ানমার অংশে একটি বড় জাহাজ অবস্থান করায় আপাতত এ নৌপথ দিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে।

শাহ পরীরদ্বীপের বাসিন্দা হাফেজ নুর কালাম জানান, গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সারা দিন ও রাতে প্রচুর বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছিল। কিন্তু ভোরে কিছুটা কমলে স্বস্তি বোধ করি। আল্লাহর রহমতে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত চলছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির। ইতোমধ্যে বিদ্রোহীরা রাখাইনের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। দুই পক্ষের গোলাগুলি ও ভারী গোলার বিস্ফোরণে মংডু, বুচিডং-রাচিডং টাউনশিপ লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। এসব শহরের সঙ্গে রাখাইনের রাজধানী সিথুয়ের সরাসরি সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্রোহীরা রাজধানীর দখল নিতে অগ্রসর হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এ রুটে চলাচলকারী একাধিক ট্রলারকে লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি চালানো হয়। নাফ নদের মোহনায় এ ঘটনাগুলো ঘটে। এরপর থেকে সেন্টমার্টিনের পথে কোনো নৌযান ছেড়ে যায়নি। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশি স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি চালানো হয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) নাকি বিদ্রোহী আরাকান আর্মি গুলি চালিয়েছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে গতকাল বঙ্গোপসাগরের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল শুরু করা হয়েছে। আজ খাদ্যপণ্য নিয়ে পাঠানো হলো ‘এমভি বার আউলিয়া’ জাহাজটি। জাহাজে পাঠানো খাদ্য দিয়ে আগামী এক মাস দ্বীপের বাসিন্দারা চলতে পারবে।

সর্বশেষ খবর