রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে এমপি আনার খুন

দুই নেতাকে গ্রেফতারে চলছে অভিযান, কাটছে না রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই নেতাকে গ্রেফতারে চলছে অভিযান, কাটছে না রহস্য

আরও ঘনীভূত হচ্ছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ রহস্য। তদন্তের শুরুর দিকে সোনা চোরাচালানের বিষয়টি সামনে উঠে এলেও কয়েকদিন ধরে তা মোড় নিচ্ছে ভিন্ন পথে। রাজনৈতিক নানা হিসাবনিকাশ এমপি আনার হত্যার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা তদন্তসংশ্লিষ্টদের। তাদের কেউ কেউ বলছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সমর্থন নিয়েই গা শিউরে ওঠা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন মূল পরিকল্পনাকারীরা। গ্রেফতারকৃতদের জবানীতে উঠে এসেছে এমন আরও দুজনের নাম। তাদের আইনের আওতায় আনতে গতকাল থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরে কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তদন্ত এগিয়ে চলছে। তদন্ত যাতে সঠিকভাবে হয় সেজন্য কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ কারও ওপরে নেই। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এমপি আনারের নিখোঁজ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহিনের হয়ে আমানুল্লাহ সাঈদ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া এবং ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু যোগাযোগ রক্ষা করতেন। গত ৬ মে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিশেষ বৈঠকে অংশ নেন তারা। সিদ্ধান্ত নেন আনারকে সরিয়ে দেওয়ার। এ জন্য শাহিনকে ২ কোটি টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বাবু। শিমুলের সঙ্গে বাবু তার মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে দেন মিন্টুকে। তবে শর্ত দেওয়া হয় আনারের লাশের ছবি এবং ভিডিও দেওয়ার পরই টাকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ১৬ মে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ফের বৈঠক করেন শিমুল ও বাবু। বাবুর মোবাইলে দেওয়া হয় এমপি আনারের নিথর দেহের ছবি এবং ভিডিও। সিদ্ধান্ত হয় ২৬ থেকে ২৯ মের মধ্যে পুরো টাকা দেওয়া হবে। যদিও বাবুর দুটি মোবাইল নিজের কবজায় নিয়েছিলেন মিন্টু। গত শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন গ্যাস বাবু। সূত্র আরও বলছে, আনার নিখোঁজের ঘটনায় সাইদুল করিম মিন্টুর জড়িত থাকার বিষয়টি প্রথমে সামনে আসে শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে। আদালতে শিমুলের দেওয়া স্বীকারোক্তিতেও তার নাম প্রকাশ পায়। এ ছাড়া গ্যাস বাবুর নামও ফাঁস করেন শিমুল। এরপর গোয়েন্দারা খুঁজতে থাকেন কেন, কীভাবে, কী কারণে এ ঘটনায় মিন্টুর নাম সামনে আসছে। আটকের পর গ্যাস বাবু এবং মিন্টুকে মুখোমুখি করা হয়। তবে তাদের কেউই একে অপরের দিকে তাকাননি। তদন্ত তদারক কর্মকর্তারা তাদের বেশ কিছু প্রশ্ন করলেও তারা নীরব থেকেছেন। বাবুর দুটি মোবাইল ফোন কেন হাতিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাকে কেন জিডি করতে বলেছিলেন সে ব্যাপারেও কোনো উত্তর দেননি মিন্টু। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজিম। বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের। ২২ মে খবর ছড়ায় কলকাতার পাশের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীভা গারডেনস নামে একটি বহুতল আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে এমপি আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভিতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি লাশ।

সর্বশেষ খবর