রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

পবিত্র হজ পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র হজ পালিত

আরাফার ময়দানে হাজির হয়ে ক্ষমালাভের আশায় আল্লাহর দরবারে রোনাজারির মাধ্যমে পালিত হয়েছে আরাফা দিবস বা পবিত্র হজ। ইসলাম ধর্মের প্রধান পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম এ হজ। গতকাল সকাল থেকে আরাফার ময়দান মুখরিত ছিল লাব্বাইক ধ্বনিতে। এদিন সারা বিশ্ব থেকে আরাফার ময়দানে জড়ো হওয়া হাজি সাহেবানরা একসঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। হজের খুতবা শোনেন। অনেকে জাবালে রহমত পাহাড়ে ওঠে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করেন। এবার পবিত্র হজের খুতবা দেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি। খুতবায় তিনি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

মক্কা নগরী থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে জাবালে রহমত পাহাড়ের পাদদেশে আরাফাতের ময়দান অবস্থিত। সৌদি আরবে ৯ জিলহজ তারিখে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত দিনমান এ আরাফায় অবস্থান করার মাধ্যমে পালিত হয় হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এদিন সকালে আরাফাতের ময়দানে থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’।

হজের খুতবায় ফিলিস্তিনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি বলেন, ফিলিস্তিনের মুসলমানরা যুদ্ধের কবলে। তারা বিপর্যস্ত। তাদের খাওয়ার পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পৃথিবীর সব ধরনের আরাম ও সুখ থেকে তারা বঞ্চিত। তাদের জন্য দোয়া করুন। বিশ্ব মুসলিমের কাছে এটা তাদের পাওনা। তিনি আরও বলেন, যারা ফিলিস্তিনিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন, সহযোগিতার চেষ্টা করছেন, অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করছেন, তারাও দোয়ার হকদার। এ ছাড়াও যারা হজযাত্রীদের সেবা করছেন তারাও দোয়ার হকদার। খুতবা শেষে ফিলিস্তিনের মুক্তি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া এবং মোনাজাত করা হয়। নবীজির সুন্নত অনুযায়ী দুপুরে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর আরাফার ময়দানসংলগ্ন মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা শুরু হয়।

আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে এই আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়েছিলেন আল্লাহর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। বিদায় হজের খুতবায় নবীজি ঘোষণা করেছিলেন, আজ থেকে ‘ইসলামকে পরিপূর্ণ ধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম’।

খুতবায় আল্লাহর প্রিয় হাবিব নবী ও রসুল মুহাম্মদ সা.-এর হাদিস উল্লেখ করে বলা হয়, যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়ালু হবেন, আল্লাহ তার প্রতি দয়াশীল হবেন। এ সময় বলা হয়- এক মুমিন আরেক মুমিনের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে এর দ্বারা আল্লাহর রহমত অর্জিত হবে।

হজের খুতবা শেষে জামাতের সঙ্গে ১৮ লক্ষাধিক হজ পালনকারী জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। হজের খুতবা সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ বিশ্বের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। এ ছাড়া সৌদি আরবের সরকার ও হজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ইউটিউব, নুসুকসহ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাসহ বিশ্বের ২০টি ভাষায় খুতবার অনুবাদ সরাসরি সম্প্রচার করে।

হজের বিধান মোতাবেক গতকাল সূর্যাস্ত পর্যন্ত হজ পালনকারীরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন। এরপর মুজদালিফায় গিয়ে এশার ওয়াক্তে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করেন। এরপর জামরাতে শয়তানকে মারার জন্য ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করেন। সৌদি আরবের স্থানীয় সময় ১০ জিলহজ যারা হজে অংশগ্রহণ করেননি তারা ঈদুল আজহার নামাজ ও কোরবানি করবেন। আর হাজিরা মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনায় ফিরে আসবেন এবং দুপুরের আগেই জামারাতুল আকাবায় (বড় শয়তানের ওপর) আল্লাহু আকবার বলে সাতটি পাথর মারবেন। এরপর হজ পালনকারীরা কোরবানি করে মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করবেন। মহিলারা চুলের অগ্রভাগ এক ইঞ্চি পরিমাণ ছোট করবেন। তার পর মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারত (তাওয়াফে ইফাদা) করবেন। সাফা ও মারওয়ায় সায়ি করবেন। এরপর আবার মিনায় ফিরে আসবেন। সেখানে ১১ ও ১২ তারিখ তিনটি জামারায় আল্লাহু আকবার বলে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। হজের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করার আগে পবিত্র কাবা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করা বিদেশিদের জন্য ওয়াজিব। উম্মতে মুহাম্মদি হিসেবে মদিনা মুনাওয়ারার সফর করে নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করার মাধ্যমে হজ পরিপূর্ণতা লাভ করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর