রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে তর্কযুদ্ধ

বিস্ফোরণ থেমেছে সরেছে যুদ্ধজাহাজ

কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপের আশপাশে গোলাগুলি এবং মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ থেমে গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা শুক্রবার ভোররাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে আর কোনো শব্দ শুনতে পাননি। অন্যদিকে নাফ নদের মোহনায় অবস্থানরত মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি সরে গিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সেটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে অবস্থান নিয়েছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সারা রাত বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পুরো টেকনাফ। শান্তিতে লোকজন ঘুমাতে পারেনি। তবে শুক্রবার ভোররাত থেকে শনিবার বেলা ১টা পর্যন্ত আর কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। নতুন করে যাতে সীমান্ত পেরিয়ে কোনো লোক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে শুক্রবার ভোররাত থেকে আর গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে দ্বীপে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। কখন থেকে তারা আগের নৌপথে (টেকনাফ-সেন্টমার্টিন) যাতায়াত করতে পারবে, সেটি নিয়ে দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষ চিন্তিত রয়েছেন। কারণ বর্তমানে যে পথে চলাচল করা হচ্ছে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় দুই দিন ধরে অবস্থান করা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি সেখান থেকে সরে গেছে। যুদ্ধজাহাজটি পরে মিয়ানমারের জলসীমানায় অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংদিয়া অংশে অবস্থান করছিল। গতকাল সন্ধ্যার পর সে স্থান থেকেও সরে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী। ইউএনও বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আর কোনো গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি এসব তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে নাফ নদের মিয়ানমার অংশে বড় জাহাজটি অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি একের পর এক মিয়ানমার থেকে সার্ভিস ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এজন্য আপাতত এ নৌপথ দিয়ে সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সার্ভিস ট্রলারগুলো বিকল্প রুটে সাগর উপকূলীয় পথেই সেন্টমার্টিন যাতায়াত করবে।

জানা যায়, আনুমানিক প্রায় এক দশক পূর্বে সেন্টমার্টিন দ্বীপসংলগ্ন স্থানে বঙ্গোপসাগরের মাঝে দুটি স্থানে বালুচর জেগে ওঠে। এই দুটো বালুচরের কারণে ভাটার সময়ে সেন্টমার্টিনে চলাচল করা যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানগুলো সাগরের ভিতর মিয়ানমারের একটি অংশ ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে বাংলাদেশের বিজিবির সমন্বয়ের কারণে এই চলাচলে এর আগে কখনোই কোনো বাধার সৃষ্টি হয়নি। তবে সাম্প্রতিক অতীতে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের এ অঞ্চল দখল করে নেওয়ার কারণে সৃষ্ট সমন্বয়হীনতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনগামী ট্রলার ও নৌযানগুলোকে লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি গুলি ছুড়ছে। ফলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাণিজ্যিক ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল সাময়িক স্থগিত করার কারণে সেন্টমার্টিনে বসবাসকারীদের মধ্যে খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা সমালোচনা চলছে।

সর্বশেষ খবর