বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
উপজেলা নির্বাচন

ভোটার সংকটে দুশ্চিন্তায় ইসি

ডামি প্রার্থী ও এজেন্ট বিক্রি নিয়ে সংকটে কমিশন

গোলাম রাব্বানী

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পাঁচ ধাপের ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে ডামি প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট বিক্রি নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে ইসি। এদিকে বিগত তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের যে হার ছিল, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তা আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। বিগত এক যুগে ভোটার উপস্থিতি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ ধাপে সার্বিকভাবে ৩৬.৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইসিসূত্র বলছেন, ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে তেমন কেউ প্রার্থী হচ্ছেন না। ফলে মানুষ ভোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সব দলের অংশগ্রহণে ভোট না হওয়ায় ভোটাররা কেন্দ্রে আসার উৎসাহ হারাচ্ছে। এদিকে শেষ ধাপের ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে সব দলের অংশগ্রহণ না থাকায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। ভোটার উপস্থিতি প্রার্থীর ওপরও অনেকটাই নির্ভর করে। ভোটার উপস্থিতি ৬০-৭০ শতাংশ হলে আমরা খুশি হতাম। আশা করি ভবিষ্যতে ভোটার বাড়বে।’

এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ ধাপে সার্বিকভাবে ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন সিইসি। ‘আরএফইডি টক’ অনুষ্ঠানে সিইসি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন করার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পাঁচ ধাপে শেষ করতে হয়েছে। শেষ ধাপে ভোট পড়েছে ৪২ শতাংশের মতো। আর সার্বিকভাবে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। দেশের ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে পাঁচ ধাপে ৪৬৯টিতে নির্বাচন শেষ হয়েছে। এবার প্রতিটি জেলায় তিনটি বা চারটি ধাপে ভোট হয়েছে। এজন্য প্রশাসনে কর্মকর্তাদের জন্য সহজ হয়েছে। স্বস্তিদায়কও হয়েছে। অবশিষ্ট উপজেলাগুলো আইনি জটিলতা ও মেয়াদপূর্তি না হওয়ায় পরবর্তীতে নির্বাচন হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ নির্বাচন করা। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে। এরপর একটা সময় আসে যখন প্রতীক বরাদ্দ করা হয়, তখন বলে দেয় তোমরা প্রচার করো। প্রচারটা কিন্তু সিইসি মাঠে গিয়ে করেন না। যারা পার্টি তারাই করেন। তাদের দক্ষতা প্রচারের ওপর নির্ভর করবে ভোটার উপস্থিতি। ভোটার উপস্থিতির হার কত হবে, তার দায় আমরা নিতে পারব না। মনে রাখতে হবে নির্বাচনটা রাজনীতি নয়। নির্বাচন কমিশন একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে। সিইসি বলেন, ডামি প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন কমিশনও সংকটে রয়েছে। ডামি বলে কোনো প্রার্থী আমাদের কাছে নেই। কিন্তু বাস্তবে আছে। ডামি প্রার্থীর সংকটে আমরাও আছি। তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী পার্টি আরও চারজনকে ডামি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। ডামি প্রার্থীরা দেখা যাচ্ছে ১৯ ভোট, ২৩ ভোট কিংবা ৯৭ ভোট পায়। অথচ প্রত্যেকেই পোলিং এজেন্ট পায়। সেই পোলিং এজেন্টগুলোকে আবার কিনে ফেলা হচ্ছে। ভিতরে একটি সংঘবদ্ধ শক্তি ক্রিয়েট করার চেষ্টা করছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ৮৭ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ৬০ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হার দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। প্রথমবারের মতো স্থানীয় এ নির্বাচন দলীয়ভাবে হয় ২০১৯ সালে। সে বছর ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ৪৫৫ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। তখন ভোটের হার ছিল ৪০ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর