শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

যশোরে থেমে নেই পাচারকারীদের তৎপরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোর সীমান্তে প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে সোনার বড় বড় চালান। তার পরও থেমে নেই সোনা পাচারকারী চক্রের তৎপরতা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, পাচারের সময় জব্দ সোনার সঙ্গে যারা আটক হন তারা সবাই বাহক। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাচার চক্রের মূলহোতাদের কখনোই শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

যশোর বিজিবি সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে পরের বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যশোরের বিভিন্ন সীমান্তে ২০টি অভিযানে জব্দ করা হয় ৯৩ কেজি ৩৪৭ গ্রাম সোনা। যার মূল্য ৮০ কোটি  টাকারও বেশি। এ ছাড়া গত বছর ১২ নভেম্বর শার্শার কৃষ্ণপুর সীমান্ত থেকে দেড় কেজি ওজনের        ১২টি সোনার বার জব্দ করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। আটক করা হয় তিনজনকে। একই বছর ২২ আগস্ট চৌগাছা উপজেলার বড় আন্দুলিয়া সীমান্ত থেকে ১৩ কেজি ৪৬৪ গ্রাম ওজনের ৪৩টি সোনার বার জব্দ করে যশোর বিজিবি। যার মূল্য ১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ ঘটনায় আটক হয় দুজন। এর আগে ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল চৌগাছার কাবিলপুর সীমান্ত থেকে ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের ১৪ কেজি ৪৫০ গ্রাম ওজনের ১২৪টি সোনার বার জব্দ করে বিজিবি। এ ঘটনায় একজন আটক হয়।

এদিকে চলতি বছরের ১৮ মার্চ যশোর শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি প্রাইভেট কার আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে জব্দ করা হয় ৩ কেজি ৩৫৬ গ্রাম ওজনের ৩২টি সোনার বার। যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এ সময় দুজনকে আটক করা হয়। এর এক মাস আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি যশোর ও খুলনা বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজারহাট থেকে ৯ কেজি ওজনের ৬০টি সোনার বার জব্দ করা হয়।

সূত্রগুলো জানায়, সোনা চোরাচালানের জন্য যশোরের শার্শা উপজেলার অগ্রভুলাট, রুদ্রপুর, সাদীপুর, শিকারপুর, কায়বা, পুটখালী এবং চৌগাছা উপজেলার কয়েকটি সীমান্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। সোনা পাচার সিন্ডিকেটগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মাঝেমধ্যে একে অপরের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়ে দেয়। তখন সহজেই তাদের আটক করা যায়। আবার অনেক সময় বড় বড় চালান ছোট ছোট ভাগ করে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাঠানো হয়। তাতে একটি চালান আটক হলেও বাকি চালানগুলো নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট রাতে যশোরের শার্শা উপজেলার শিকারপুর সীমান্তের নারিকেলবাড়িয়া গ্রাম থেকে ৬২৪টি সোনার বার জব্দ করে বিজিবি। যার ওজন ৭২ কেজি ৪০০ গ্রাম। এ মামলায় পুলিশ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়। পাঁচ বছর পর ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের রায়ে তিন আসামির মৃত্যুদন্ড, দুই ভারতীয় নাগরিককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং চারজনকে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। সাম্প্রতিককালে যশোরে সোনা পাচার মামলায় এটাই বড় ধরনের রায়।

এর পরও যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচারের প্রাক্কালে নিয়মিত বিরতিতে সোনা উদ্ধার করেন বিজিবি সদস্যরা। ১৩-১৪ কেজির সোনার চালানও উদ্ধার হয়। বিজিবির পাশাপাশি সোনার চালান আটক করে গোয়েন্দা পুলিশও। প্রায় প্রতিটি চালান আটকের সময় ১-২ জন করে পাচারকারীও আটক হয়। তার পরও সোনা চোরাচালান বন্ধ করা যায়নি।

বিজিবি, পুলিশ ও সীমান্ত এলাকার সূত্রগুলো জানায়, সোনা চোরাচালানের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশে বাহক হিসেবে নিম্নবিত্ত অভাবী মানুষকে নিয়োগ করা হয়। পুরো চোরাচালান প্রক্রিয়াটি কাটআউট পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। যে কারণে এ প্রক্রিয়ায় জড়িত কেউই ওপরের নির্দেশদাতাকে চেনেন না বা তার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ফলে পাচারের সময় উদ্ধার হওয়া সোনার সঙ্গে যারা আটক হন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাচার চক্রের মূলহোতাদের কখনোই শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সর্বশেষ খবর