শিরোনাম
শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঝিনাইদহ সীমান্তে সক্রিয় একাধিক সিন্ডিকেট

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে সোনা পাচারের একাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। এর মধ্যে যশোর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে যাওয়ায় জায়গাটি সহজ রুট হিসেবে মনে করেন সোনা পাচারকারীরা। কারণ এখান থেকে কালীগঞ্জ অতিক্রম করে সহজেই চলে যাওয়া যায় সীমান্তে। তার পরও কালীগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন রহস্যজনক কারণে সোনা পাচারের ঘটনা এড়িয়ে যায়। চোরাচালান প্রতিরোধে একটি চেকপোস্টও চোখে পড়ে না ঝিনাইদহ সদর থেকে কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরে।

সর্বশেষ দেশে সোনা চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় আলোচনায় আসে  মহেশপুর সীমান্ত। সেখানে একাধিক চোরাচালান এবং পাচারকারী চক্র রয়েছে। যার মধ্যে বিজিবির সোর্স পরিচয়ে কিছু লোক এ চোরাচালান সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহেশপুরের নয়টি গ্রাম একেবারেই সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় সেখান দিয়ে বেশির ভাগ স্বর্ণ পাচার হয়। গ্রামগুলো হলো বাঘাডাঙ্গা, পলিয়ানপুর, যাদবপুর, জুলুলী, লেবুতলা, মরকধ্বজপুর, শ্যামককুড়, রায়পুর ও কচুয়ারপোতা। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বাঘাডাঙ্গা গ্রামে এক সোনা চোরাকারবারির গুলিতে শামিম হোসেন ও মন্টু মিয়া নামে দুজন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার নেপথ্যে উঠে আসে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা।

সূত্র বলছেন, সোনা চোরাচালান ঠেকানো খুবই কঠিন। কেননা এর পেছনে অনেক বড় মাপের লোকদের হাত থাকে। তাদের চোখের কাঁটা হওয়ার চেয়ে নীরব থাকাই বেশি নিরাপদ। এ কারবারে রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় তাদের কেউ সন্দেহ করে না। সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তাকে পছন্দের লোক হিসেবে বদলি করিয়ে আনে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট। সেখানে তাদের নিজস্ব লোক বসানো হয়।

বিজিবি সামান্য পরিমাণ সোনা আটক করলেও মূল হোতারা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সোনা চোরাচালান নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় খুনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। কিন্তু বিচার হয়নি একটিরও। ভারতে সোনার চাহিদা বেশি। প্রতি বছর দেশটিতে প্রচুর সোনার প্রয়োজন হয়। এ সোনার ওপর আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। এ কারণে বৈধ পথে সোনা নিলে তাদের তেমন লাভ হয় না। তাই সোনা চোরাচালানের জন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত বেছে নিয়েছে চোরাকারবারিরা।

এ ছাড়া সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে সম্প্রতি একজন চোরাকারবারি ৭ কেজি সোনা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েন। যশোর সীমান্তবর্তী ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার আংরাইলে জানুয়ারিতে ৩০টি সোনার বার ও বিস্কুট জব্দ করে বিএসএফ। যার ওজন ৪ কেজি ৮২০ গ্রাম। চলতি বছরের প্রথম দিকে মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৩০৪টি সোনার বার জব্দ করে বিজিবি। ৩৮ কেজি ৪০ গ্রাম ওজনের ওই সোনার বাজারমূল্য আনুমানিক ২৬ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এ সময় আটজন চোরাকারবারি আটক হয়েছেন। মামলা হয়েছে শুধু ১২টি। শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও এ দেশ থেকে পাচার হওয়া প্রচুর সোনা আটক হচ্ছে। এর বেশির ভাগই আটক হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সীমান্তসংলগ্ন এলাকায়। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া ১০ কেজি ৭৩ গ্রাম সোনা জব্দের তথ্য জানান পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার হোরান্দিপুর আউটপোস্টের বিএসএফ জওয়ানরা। এ বিষয়ে মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আজিজুস শহীদ বলেন, ‘চোরাচালান ঠেকাতে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সীমান্তে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর