শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী

হাসিনা-মোদি বৈঠক আজ

বৈঠকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক - ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

হাসিনা-মোদি বৈঠক আজ

গতকাল দিল্লি বিমানবন্দরে নেচে গেয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান ভারতীয় শিল্পীরা

ভারতে দুই দিনের সরকারি সফরে গতকাল নয়াদিল্লি গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়েছে ভারত। আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। পরে হবে উপমহাদেশের দুই শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এ বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে গতকাল মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। টানা ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন মেয়াদে এটাই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। অবশ্য চলতি মাসে মোদির শপথ       গ্রহণ উপলক্ষে এক দফা দিল্লি সফর করেছেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ ফ্লাইটে গতকাল দুপুর ২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় তিনি পৌঁছান নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক (পালাম) বিমানবন্দরে। সেখানে তাঁকে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং ও নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোস্তাফিজুর রহমান উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁকে স্বাগত জানিয়ে লোকনৃত্য পরিবেশন করা হয়। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোটেল তাজ প্যালেসে যান। বিমানবন্দর থেকে তাজ প্যালেসে যাওয়ার রাস্তার দুই পাশ বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি ও প্ল্যাকার্ড দিয়ে সাজানো হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে বিভিন্ন উদ্ধৃতির প্ল্যাকার্ড দেখা যায় রাস্তার দুই পাশে। বিকালে তাজ প্যালেসে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

সফরসূচি অনুসারে, আজ সকালে শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এরপর তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন। পরে যাবেন ভারতের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে হবে দুই নেতার একান্ত বৈঠক। পরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের আলোচনা শেষে সমঝোতা স্মারক-চুক্তি স্বাক্ষর ও নবায়নের পর তা বিনিময় করবেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। এরপর আনুষ্ঠানিক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন দুই শীর্ষ নেতা। হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাঁর সচিবালয়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিকালে আবারও যাবেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। সেখানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। সফর শেষে আজ সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার উদ্দেশে দিল্লি ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত পৌঁছানোর আগেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে এবং গভীর করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পর প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন। উভয় দেশের বহু আকাক্সক্ষা আছে। সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে শনিবার (আজ) দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। তখন বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের খবর, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে মূলত রাজনৈতিক ঐকমত্যের অঙ্গীকার পুনরায় ঘোষিত হবে। উপমহাদেশে চীনের ভূমিকার প্রেক্ষিতে এ অঙ্গীকারকে বিশেষ মাত্রায় দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক ডজনের বেশি নতুন ও পুরান সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর ও নবায়ন হবে। সূত্র জানান, বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পাবে নিরাপত্তার বিষয়টি। মিয়ানমার পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট, ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে সংকট, এ অঞ্চলে চীনের প্রভাবসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া শীর্ষ বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি, নতুন প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। তা ছাড়া মহাকাশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্তহত্যা, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও ঋণসহায়তার মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। ভারতের ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে নতুন রূপরেখা বা বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর