শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিলেটে বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াল

প্রতিদিন ডেস্ক

সিলেটে বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াল

সুনামগঞ্জে ভোগান্তিতে পানিবন্দি লাখো মানুষ, সিরাজগঞ্জে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে নদীতীরবর্তীরা বগুড়ায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা-আতঙ্ক,  রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপরে, গাইবান্ধায় প্লাবিত নিম্নাঞ্চল লালমনিরহাটে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

 

সিলেটে বন্যা আক্রান্তের  সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। সুনামগঞ্জে ভোগান্তিতে আছে পানিবন্দি লাখো মানুষ। নেত্রকোনায় কমতে শুরু করেছে উব্দাখালি নদীর পানি। সিরাজগঞ্জে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে নদীতীরবর্তীরা। বগুড়ায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে বন্যা-আতঙ্ক। রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপরে। গাইবান্ধায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৫ সে. মি. ওপরে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। নীলফামারীতে বুড়িতিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লালমনিরহাটে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

সলেট : সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি ও কোথাও অবনতি হয়েছে। গেল দুই দিন ধরে বৃষ্টিপাত কমায় কমছে নদীর পানিও। ফলে উজান এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আর ভাটি অঞ্চল দিয়ে পানি নামতে থাকায় নিম্নাঞ্চলে কিছুটা অবনতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী গেল ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলায় নতুন করে আরও প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। সব মিলিয়ে বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারার পানি সব কটি পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘আজ বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।’

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সিলেটের বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বন্যা আক্রান্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, শিশু ও গোখাদ্যসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যার উন্নতি হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় কমছে নদী ও হাওরের পানি। ভেসে উঠছে রাস্তাঘাট। স্বাভাবিক হচ্ছে যানচালচল। তবে জেলার ভাটির দিকের অনেক এলাকা এখনো বন্যাকবলিত। ভোগান্তিতে পানিবন্দি লাখো মানুষ।

জেলা প্রশাসন জানায়, বন্যায় জেলার ১২টি উপজেলায় ১৩০৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ। এ ছাড়া সরকারিভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬৯৪টি আশ্র?য় কেন্দ্র। সেগুলোতে ২৪ হাজার বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট বলেন, বন্যাদুর্গত প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। যাতে কাউকে না খেয়ে না থাকতে হয়।

নেত্রকোনা : পাহাড়ি ঢলে বৃদ্ধি পাওয়া নেত্রকোনার প্রধান চার নদনদীর মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করা সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দার উব্দাখালি নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ১১ সেন্টিমিটার কমে সকাল ৯টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে গত বুধবার রাত থেকে গত বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল ৫১ সেন্টিমিটার। এদিকে কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী মারা গেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রাতকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে কলমাকান্দা থানার ওসি লুৎফুল হক জানান। শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন (১১) ওই গ্রামের আবু কালামের ছেলে। গাজীপুরে একটি মাদরাসায় হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করত। সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের নিমাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকের সবজি খেত, তিলখেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মধ্যে পড়ছে। এ ছাড়াও পানি বাড়ায় সদর উপজেলার কাওয়াকোলা চরের বিভিন্ন পয়েন্টসহ যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদী-তীরবর্তী মানুষের মধ্যে ভাঙন ও বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বগুড়া : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিকট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে  উপজেলার  চরাঞ্চালের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে চরাঞ্চলের মানুষ  বন্যা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার চালুয়াবাড়ী, হাটশেরপুর, সারিয়াকান্দি সদর, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল, কামালপুর, কুতুবপুর এবং চন্দনবাইশা ইউনিয়নের  চরাঞ্চলের  নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ফলে এসব  চরাঞ্চলে  বসবাসরত মানুষ বন্যার আতঙ্কে রয়েছে।

রংপুর : রংপুরে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ধরা হয় ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় ২৯ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে খেতের ফসল ডুবে গেছে। এদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলায়ও পানি বৃদ্ধির কারণে  কয়েক শ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সবগুলো নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমায় ছুঁইছুঁই করছে। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। গতকাল বিকাল ৩টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, দুপুর ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি (কাউনিয়া পয়েন্টে) বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা গত কাল এ সময় ২০ সে. মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৭৬ সে. মি, ঘাঘট নদীর পানি ১২৯ সে. মি ও করতোয়া নদীর পানি ১৭৬ সেন্টেমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। এখনো পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ৭ হাজার পরিবার। পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলের ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণ। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর